মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন শরীফের ঘুষ দুর্নীতির অডিও ব্যাংকে লেনদেনের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হলে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে এই সরকারি কর্মকর্তার অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা সমালোচনা।
এরপর দুর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তা নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে অর্থ বিলিয়ে গতকাল গজারিয়া উপজেলা চত্বরে আওয়ামী সরকারের কিছু দোসর ও গজারিয়ায় আওয়ামী লীগের পূর্ণবাসনকারী কতিপয় বিএনপি'র দালাল নেতাকে দিয়ে মানববন্ধন করিয়ে নিজেকে রক্ষা করার প্রাণপণ চেষ্টা করছে – এমন গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে এই সরকারি আমলার বিরুদ্ধে।
তবে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ কেলেঙ্কারি সহ নানান অনিয়মের অভিযোগ তথ্য প্রমাণসহ একাধিক সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামুন শরীফের অপকর্মের ফিরিস্তি ফাঁস হওয়ার পরও তিনি এখনও আছেন বহাল তবিয়তে।
তারই ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনার ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
এদিকে অনুসন্ধানে ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে মামুন শরীফ গজারিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করার পর গজারিয়ার বিভিন্ন নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, অবৈধ গ্যাস দিয়ে চলা বিভিন্ন ফ্যাক্টরি, ভূমিদস্যু সহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত লোকজনের সাথে আঁতাত করে মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে ওইসব অবৈধ কাজ করার সুযোগ করে দিতেন।
এর বিনিময়ে এসিল্যান্ড মামুন শরীফ অবৈধ বালু উত্তোলনকারী, অবৈধ গ্যাস দিয়ে বিভিন্ন ফ্যাক্টরি চালানো দুর্বৃত্ত ও বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত লোকজনের কাছ থেকে ব্যাংক একাউন্ট এবং সরাসরি প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন।
এই অবৈধ কাজের তথ্য প্রমাণের নথি আমাদের হাতে আসার পর এসিল্যান্ডের ঘুষ-দুর্নীতির নানান অনিয়মের প্রতিবেদন সংবাদপত্রে প্রকাশ করলে এসিল্যান্ড তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা পরিচয় দিয়ে তার এই অপকর্ম ধামাচাপা দিতে তিনি বিএনপি নামধারী কিছু ব্যক্তিদের সাথে আঁতাত করে মোটা অংকের টাকা দিয়ে গতকাল তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগগুলো মিথ্যা আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতাদের দিয়ে তার পক্ষে মানববন্ধন করান ঘুষখোর এসিল্যান্ড মামুন শরীফ।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে আরো জানা গেছে মামুন শরীফ তার ঘুষ-দুর্নীতি ও নানান অবৈধ কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলের দরজায় শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। এই দৌড়ঝাঁপের অংশ হিসেবে গজারিয়া থানার বিএনপির তথাকথিত একাধিক নেতার সাথে রোববার রাত্রে মিটিং করে তাকে রক্ষার জন্য মোটা অংকের টাকা দিয়ে এই মানববন্ধন করার কথা একাধিক সূত্রে জানা যায়।
সূত্রে আরো জানা গেছে, বিএনপি'র যেসব নেতার মাধ্যমে এসিল্যান্ড তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগের পক্ষে সাফাই গাইতে মানববন্ধন করান, সেই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, অবৈধ কর্মকাণ্ড, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের পূর্ণবাসন এবং মামলা বাণিজ্যসহ অসংখ্য অভিযোগ।
মামুন শরীফের পক্ষে মানববন্ধন করা গজারিয়া থানা বিএনপি'র প্রথম সারির "বালু দরবেশ" সহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন গজারিয়াবাসী।
আরও জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির ওই সকল নেতারা গজারিয়া এলাকায় প্রবেশ করে শুরু করেন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দখল, অবৈধ তেল চোরাচালানি, মাদক ব্যবসা, অবৈধ বালু উত্তোলন, মামলা বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম।
বিশ্বস্ত সূত্রে আরো জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর গজারিয়া এলাকার আওয়ামী লীগ দোসরদের মামলা থেকে রক্ষা করে এলাকায় যাহাতে তাদের পূর্ণবাসন করা যায় এবং তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কুক্ষিগত করা যায় – সেই অভিপ্রায়ে গজারিয়া উপজেলার বর্তমান সময়ে বালু দরবেশ উপাধি পাওয়া জনৈক বিএনপি নেতা এবং হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া আরেক বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী দোসরদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পরে এবং অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে ওই অর্থের বিনিময়ে বিএনপির এই দুই নেতা আওয়ামী দোসরদের রক্ষা করার জন্য এই অর্থ গ্রহণ করেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সেই নেতারাই বর্তমানে দুর্নীতিবাজ এক সরকারি কর্মকর্তাকে রক্ষা করতে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে তাদের লোকজন দিয়ে ঘুষখোরের পক্ষে মানববন্ধন করায় – তাদের উদ্দেশ্য কী? এলাকাবাসী ও বিভিন্ন মহল জানতে চায়।
যারা দুর্নীতিবাজ এসিল্যান্ডের ঘুষ-দুর্নীতি অপকর্মের পক্ষে সাফাই গাইছেন – তারা পুরো গজারিয়া এলাকায় নিজেদের দখলদারিত্বের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য দুর্নীতিবাজ অফিসারদের সাথে হাত মিলিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এই মানববন্ধন করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
তারা একসময় দিনে অবৈধ বালু মহল উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশ করলেও রাতের আধারে দেখা যেত অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের পাশে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ এবং হতাশ বিএনপি নেতাদের এই কর্মকাণ্ড দেখে।
আরো জানা গেছে, মামুন শরীফ গজারিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করার পর তার নেতৃত্বে একাধিক অবৈধ বালু মহল চালু হয়। এই বালু মহলগুলো থেকে প্রতিদিন তিনি নিতেন লাখ লাখ টাকা।
আবার মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে তার অপকর্ম যাহাতে কেউ টের না পায়, সেজন্য করতেন সংবাদ সম্মেলন।
সূত্রে আরো জানা গেছে, অবৈধ বালু মহলগুলোতে বিভিন্ন সময় নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের টিকিও ছুঁতে পারেনি। জানা যায় অভিযানের আগে মামুন শরীফ অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কাছে নিজেই সংবাদ পৌঁছে দিতেন।
সে রকম একটি অডিও আমাদের হাতে এসেছে যা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে।
এই অবৈধ বালু মহলগুলোর একটি থেকেই গত সাত মাসে নিয়েছেন তিনি প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা – সরাসরি এবং ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের ব্যাংক রশিদ পাওয়া গিয়েছে।
আরো জানা গেছে, মামুন শরীফ গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সাইদুর রহমান গং এর মালিকানাধীন নির্মাণাধীন বহুতলা বিল্ডিং-এর কাজ বন্ধ করে দিয়ে ভবন মালিকদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
আদালতের আদেশ অমান্য করে ওই বিল্ডিং-এর কাজ বন্ধ করে দেন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে। এরপর সার্ভেয়ার কামালের মাধ্যমে অফিসে ডেকে নিয়ে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন।
আমার বার্তা/জেএইচ