এর আগে টেস্টে কখনোই ১৬২ রানের বেশি তাড়া করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। তাই সিলেট টেস্টে জিততে হলে সফরকারীদের রেকর্ড গড়তে হতো। সেটাই করল রোডেশিয়ানরা। বাংলাদেশকে ৩ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল তারা। তাতে ৪ বছর পর লাল বলের ক্রিকেটে জয়ের স্বাদ পেল। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ বছর পর টেস্ট জিতল জিম্বাবুয়ে।
সিলেটে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ২৭৩ রান তুলে। ৮২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৫৫ রানে থামে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় রোডেশিয়ানরা।
১৭৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে উড়ন্ত শুরু পায় জিম্বাবুয়ে। দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারান রীতিমতো ঝড় তোলেন! বিশেষ করে বেনেট শুরু থেকেই ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করেছেন। প্রথম ইনিংসেও নতুন বলে কাউন্টার অ্যাটাককে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। এবারও হাঁটলেন একই পথে। তাতে সফল।
বেনেটের থেকে কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেও বাংলাদেশি বোলারদের খেলতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি কারানকে। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এই ওপেনার শেষ পর্যন্ত সাজঘরে ফিরেছেন ফিফটি না পাওয়ার আফসোস সঙ্গী করে!
ইনিংসের ২১তম ওভারে কারানকে ফেরান মেহেদি আহসান মিরাজ। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের ফুল লেংথের বল লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়েন কারান। ৭৫ বলে ৪৪ রান করেছেন এই ওপেনার। তার বিদায়ে ভাঙে ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি।
মিরাজের পর ব্রেকথ্রু দিয়েছেন আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ২৬তম ওভারের শেষ বলটি মিড স্টাম্পের অপর করেছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সেখানে টার্নের আশায় ব্যাট পেতেছিলেন নিক ওয়েলচ। তবে বল সোজা আঘাত হানে তার পায়ে। সাজঘরে ফেরার আগে ১৯ বলে ১০ রান করেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার।
২ উইকেটে ১১৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের চা বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। বিরতির পর জ্বলে উঠেন মিরাজ। ৩১তম ওভারের প্রথম বলে শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন উইলিয়ামস। মিরাজের বলে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ বলে ৯ রান।
নিজের পরের ওভারেও উইকেট পেয়েছেন মিরাজ। এবার তার শিকার বেনেট। ইনিংসের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাট করা এই ওপেনার বড় শট খেলতে গিয়েই ধরা পড়েন। লং অনে মুশফিকের তালুবন্দি হওয়ার আগে ৮১ বলে করেছেন ৫৪ রান।
চাপের মুখে সুবিধা করতে পারেননি অভিজ্ঞ ক্রেগ আরভিন। তাইজুলের করা লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েছেন তিনি। অবশ্য শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। পরে রিভিউ নেন শান্ত। তাতে দেখা যায় ব্যাট ছুঁয়ে বল জমা পড়েছে উইকেটরক্ষক জাকেরের গ্লাভসে।
সাতে নেমে দ্রুত ফিরেছেন নায়াশা মায়াভো। নিজের খেলা তৃতীয় বলেই সিলিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন। তবে সেটা হাতে জমাতে পারেননি বদলি ফিল্ডার জাকির হাসান। অবশ্য তার সেই ভুলের জন্য খুব বেশি মাশুল দিতে হয়নি। পরের ওভারেই মিরাজ এসে বোল্ড করেন মায়াভোকে। ৪ বল খেলে ১ রান করেছেন তিনি।
ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকেও দ্রুত ফেরান মিরাজ। তাতে দ্বিতীয় ইনিংসেও ফাইফার পেয়েছেন তিনি। দুই ইনিংসেই ফাইফারসহ ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। একই সঙ্গে টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন এই অফ স্পিনার।
মাসাকাদজাকে সরাসরি বোল্ড করে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন মিরাজ। তবে বাধা হয়ে দাড়ায় এনগারাভা-ওয়েসলি মাদেভারে জুটি। তাদের অবিচ্ছিন্ন ১৩ রানের জুটিতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সফরকারীরা।
আমার বার্তা/এমই