ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) যুক্ত করার নামে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না ৬৩টি বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। ফলে ৬ মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনে থাকা ৬৩টি বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে স্থানান্তরের নামে ইএফটিতে যুক্ত না করায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন, ইএফটিতে যুক্ত না করায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৬ মাসের বেতন তারা এখনো পাননি। এমনকি ঈদ বোনাস, বৈশাখী ভাতাও পাননি। তবে মে মাসের বেতন ও ঈদুল আজহার বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পিআইইউ) প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান ও উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম (এমপিও)। এ ছাড়াও নতুন অর্থবছর থেকে বেতন-ভাতা স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষকরা পাবেন বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে ১৯৯৫ সালে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হয়। প্রথমে এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনে। পরে ২০০৯ বা ২০১০ সালের দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়, বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন-ভাতা মাউশি দেবে না, এসব প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর দেবে। সে সময় মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে মাউশি এসব প্রতিষ্ঠান কারিগরিতে স্থানান্তর করে। তখন ভুলক্রমে প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান মাউশিতে থেকে যায়। পরে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অনেক প্রতিষ্ঠানকেই কারিগরিতে আবার স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ ৬৩টি প্রতিষ্ঠান মাউশিতেই থাকে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিয়ে আসছে মাউশি।
এদিকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) চালু হয়। নতুন এ পদ্ধতিতে বেসরকারি এমপিওভুক্ত কারিগরি ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যুক্ত হতে পারেননি। তখন ইএফটিতে যুক্ত করতে মাউশিতে যোগাযোগ করেন এসব শিক্ষক। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকেই সবার বেতন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওই মাসেই মাউশি এই ৬৩ প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে ও মতামত চেয়ে একটি চিঠি পাঠায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরকে। এসব চিঠি চালাচালির মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ও শিক্ষকদের বেতন-ভাত দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সর্বশেষ চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও উপ-পরিচালক শিক্ষকদের মে মাসের বেতন ও ঈদুল আজহার একটি বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দেন। আর বকেয়াগুলো নতুন অর্থবছরে বাজেট আসলে দেওয়া হবে বলে তাদের জানানো হয়।
কারিগরি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ৬ মাস ধরে বেতন পাইনি। আর ২টি বোনাস বা ভাতা পাইনি। তবে কারিগরি অধিদপ্তরের পরিচালক ও উপপরিচালক বলেছেন, মে মাসের বেতন ও একটি ইদুল আজহার একটি ভাতা দেবে আমাদের। আর বকেয়াগুলো নতুন অর্থবছরে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত আশ্বাসের মধ্যেই আছি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শোয়াইব আহমাদ খান, পরিচালক (পিআইইউ) প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান ও উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলমকে (এমপিও) একাধিকবার কল করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আমার বার্তা/এল/এমই