সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং নীতিমালাসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় গৃহকর্মী শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই নতুন আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা জরুরি।
মঙ্গলবার (২৭ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সংলাপে এ সব কথা বলেন তারা। উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), শাপলা নীড় ও এডুকো-বাংলাদেশ আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি জিনাত আরা। এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক এম এ করিমের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তৃতা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব সারাওয়াত মেহজাবীন, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সালমা আলী, আইএলও বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সৈয়দা মুনিরা সুলতানা, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, এডুকোর কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহরীন, এডুকোর ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম, আইএলও’র ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মনিরা সুলতানা, শিশু অধিকার ফোরামের ভাইস-চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান কামাল, ইনসিডিনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক অ্যাডভোকেট রফিকুল আলম, এএসডি’র প্রকল্প পরিচালক ইউকেএম ফারহানা সুলতানা প্রমূখ।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন খান। তিনি বলেন, এসডিজি’র আলোকে ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। অথচ গৃহকর্মী শিশুদের প্রতিনিয়ত মারধরসহ নানা নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। তাই দেশের নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় সরকারের ওই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিচারপতি জিনাত আরা বলেন, শিশুশ্রম বিশ্বের কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই শিশুশ্রম বন্ধ করে শিশুদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমরা সভ্য সমাজের বাসিন্দা কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে। তিনি আরো বলেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহকর্মে নিয়োজিত অনেক শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আবার কারো আশ্রয় হয়েছে যৌন পল্লীতে। এমনকি অনেকে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাই সরকার এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে সকল ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করছে। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সকল প্রকার শিশুশ্রম বন্ধে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করেন এম এ করিম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আলোকে সরকার ২০২৫ সনের মধ্যে সব ধরনের শিশু শ্রম নিরসনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকারের এই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু গৃহকর্মীর অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
আমার বার্তা/এমই