ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে টানা ১১ ম্যাচ হারের পর অবশেষে জয়ের দেখা পেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ওয়ানডেতে টাইগারদের ৫ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো ক্যারিবীয়রা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য ছিল ২৯৫ রানের। সেন্ট কিটসের বেসেতেরের ওয়ার্নার পার্কে ১৪ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় স্বাগতিকরা। ওয়ানডেতে এ মাঠে এটি সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।
২৯৫ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় ধীর সূচনা করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪৭ বলে ২৭ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন ব্রেন্ডন কিং আর এভিন লুইস। দুজনই এলবিডব্লিউ হন তিন বলের ব্যবধানে। কিংকে (১৭ বলে ৯) শিকার করেন তানজিম হাসান সাকিব, লুইসের (৩১ বলে ১৬) উইকেট নেন নাহিদ রানা।
তৃতীয় উইকেটে শাই হোপ আর কিয়েসি কার্টি ৮২ বলে যোগ করেন ৬৭ রান। জুটিটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। টাইগার লেগস্পিনারের শর্টে পড়া বল কার্টি পুল করতে গেলে ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে উঠে যায় ওপরে। মিরাজ মিডউইকেটে নেন সহজ ক্যাচ। ৩৭ বলে ২১ করেন কার্টি।
৯৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন শাই হোপ আর শেরফান রাদারফোর্ড। দুজন বলতে গেলে উইকেটে জমে গিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় রান ওভারপ্রতি আটের ওপর চলে যায়। তবু হাত খুলছিলেন না তারা। ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের পক্ষে।
শাই হোপ ফিফটি করেন ৬০ বলে। এরপর আস্তে আস্তে হাত খোলা শুরু করেন হোপ আর রাদারফোর্ড। পঞ্চম উইকেটে ৯৩ বলে ৯৯ রান তুলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তারা। এই জুটিটি অবশেষে ভাঙেন মিরাজ। ৮৮ বলে ৩ চার আর ৪ ছক্কায় ৮৬ করে ফেরেন হোপ।
কিন্তু দুর্দান্ত ধারাবাহিক রাদারফোর্ডকে আটকানো যায়নি। ১০ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে টানা পঞ্চম পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলা এই ব্যাটার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন ৭৭ বলেই।
৮০ বলে তার ৭ চার আর ৮ ছক্কায় গড়া ১১৩ রানের ইনিংসে দুটি জুটির সামনে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে শাই হোপের সঙ্গে ৯৩ বলে ৯৯ এবং পঞ্চম উইকেটে গ্রিভসের সঙ্গে ৫৭ বলে ৯৫। মূলত এ দুটি জুটির কারণেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
রাদারফোর্ড শেষ পর্যন্ত সৌম্য সরকারের শিকার যখন হন, জয় থেকে মাত্র ৭ রান দূরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গ্রিভস ৩১ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছাড়েন।
এর আগে তানজিদ হাসান তামিম আর মেহেদী হাসান মিরাজের জোড়া হাফসেঞ্চুরির পরও ১৯৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে জাকের আলী আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অসাধারণ এক জুটি।
ঝোড়ো যে জুটিতে ভর করেই মূলত বড় পুঁজি দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ। ৬ উইকেটে দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৯৪ রানের।
৪৩ বলে ক্যারিয়ারের ৩০তম ফিফটি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ। ওয়ানডেতে প্রথম হাফসেঞ্চুরির সুযোগ ছিল জাকেরেরও। কিন্তু ইনিংসের ২ বল বাকি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন তিনি।
তাতেই ভাঙে ৭৪ বলে ৯৬ রানের মারকুটে জুটি। ৪০ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪৮ রানে সাজঘরে ফেরেন জাকের। ৪৪ বলে ৫০ রানে মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৩টি করে চার-ছক্কায়।
বেসেতেরেতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করে বাংলাদেশ। দৃষ্টিনন্দন তিনটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু তাতেই মনে হচ্ছিল অতি আত্মবিশ্বাস ভর করেছে তার ওপর। যার খেসারত দিতে হলো ৫ম ওভারের ৫ম বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১৮ বলে ১৯ রান করে ফিরে যান তিনি।
সবাই হয়তো ভেবেছিলেন, সৌম্য গ্লোবাল টি-২০ লিগে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার ধারাবাহিকতা নিয়ে আসবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও; কিন্তু পুরনো ফর্মের ধারাবাহিকতাই টেনে আনলেন তিনি। দ্রুত আউট হয়ে বিপদে ফেললেন বাংলাদেশকে।
সৌম্য যদি বাংলাদেশ দলকে বিপদে ফেলে যান, তাহলে লিটন দাস ফেলেছেন মহা বিপদে। কারণ, তিনি ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন ৭ বলে মাত্র ২ রানের ইনিংস।
৪৬ রানে ২ উইকেট পড়ার পর জুটি বেঁধে দলকে উদ্ধারের কাজ করেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম এবং অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ৭৯ রানের জুটি গড়েন তারা দু’জন।
এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তানজিদ হাসান তামিম, কিন্তু ইনিংসটাকে আরও বড় করতে পারেননি না। ৬০ রানের মাথায় আউট হয়ে যান বাঁহাতি এই ওপেনার। ৬০ বলে খেলা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬টি বাউন্ডারি আর ৩টি ছক্কায়।
এরপর আফিফ হোসেনকে নিয়ে ৬২ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। ২৯ বলে ২৮ করে আউট হন আফিফ। মিরাজ খেলছিলেন দেখেশুনে ধীরগতিতে। শেষ পর্যন্ত মারমুখী হতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সিলসকে বড় শট খেলতে গেলে বল উঠে যায় আকাশে। ১০১ বলে ৬ চার আর ১ ছক্কায় মিরাজের ইনিংসটি ছিল ৭৪ রানের।
এরপর মাহমুদউল্লাহ আর জাকেরের ঝোড়ো জুটিতে ২৯৪ রান পর্যন্ত গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ দুই বলে রান আসলে হয়তো ৩০০ ছোঁয়া হয়ে যেতো। জাকের আউট হওয়ার পর শেষ বলটি ব্যাটে লাগাতে পারেননি রিশাদ হোসেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোমারিও শেফার্ড ৫১ রানে ৩টি আর আলজেরি জোসেফ ৬৭ রানে নেন ২টি উইকেট।
আমার বার্তা/এমই