টাঙ্গাইলের নাগরপুরে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে হলুদ সরিষা ফুল। সকালের সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষা ফুলের সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক। মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ মাছিরা। পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে সরিষা ফুলগুলো বাতাসে দোল খেতে থাকে। ফুলগুলোর তাদের কলি ভেদ করে সুভাস ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। এ যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলা ভূমি।
সরেজমিন (বুধবার) সরিষা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সরিষা মাঠ জুড়ে ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিনোদন প্রেমিরা। সরিষা মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউবা আবার মোবাইলফোনে সেলফি তুলছেন।
একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণে সরিষার আবাদ হতো। সয়াবিনের ওপর নির্ভরতা বাড়ায় বর্তমানে অনেকটাই কমে গেছে সরিষার আবাদ। তবুও ধান চাষের পাশাপাশি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সরিষার চাষ হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। আবাদও হয়েছে ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। উপজেলায় ৩৮০০০ হাজার মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদিত হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষক আনোয়ার মিয়া বলেন, সরিষা চাষ করতে প্রতি কানি জমিতে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। লাভ হবে প্রতি কানিতে ৫ হাজার টাকা। সরিষা চাষে যে সার আমরা ব্যবহার করি, পরবর্তীকালে ইরি ধান রোপনের সময় সার বেশি দেওয়া লাগে না। এতে আমাদের খরচ কিছুটা কমে যায়। এবার মেঘ-বৃষ্টি না হলে আমরা লাভবান হবো।
নাগপুর উপজেলার কলিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ হালিম বলেন,গত বছর এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম। কিন্তু এ বছর আমনের শেষ সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ধান উঠতে দেরি হয়ে যায়। এ জন্য অল্প কিছু জমিতে সরিষা চাষ করেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন শাকিল বলেন, তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কিছু স্থানীয় জাত সহ উন্নত জাতের সরিষার ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে নাগরপুরে। সরিষার ফলন বৃদ্ধিতে মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে মৌচাষীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নাগরপুরে সরিষা জমির পাশে বসানোর কাজটিও করছে কৃষি বিভাগ। উল্লেখ যে মৌমাছির উপস্থিতিতে সরিষার ফলন প্রায় ২৫% বৃদ্ধি পায় । সরিষা উৎপাদনে টাঙ্গাইল জেলায় নাগরপুর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে । সার্বিক দিক বিবেচনা করে নাগরপুর উপজেলায় সরিষার যে ফলন হবে তা দ্বারা নাগরপুরবাসী নিজেদের দৈনন্দিন তেলের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করছি।