গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেশে জ্ঞানের রাজ্যে অনাচার চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, এই সময়জুড়ে পরিবার তান্ত্রিক বইয়ের প্রাধান্য বেশি ছিল। তারা জ্ঞানের রাজ্যে জেনোসাইড (গণহত্যা) চালিয়েছিল। তবে এখন সে অবস্থা পরিবর্তন করার সময় এসেছে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও বণিক বার্তার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ৮ম নন-ফিকশন বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা ক্রমান্বয়ে ফেসবুক তথ্যনির্ভর একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি। এমন অবস্থায় এখানে নন-ফিকশন বই না থাকলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি সুন্দর আলোচনা, ভালো তর্ক করার জন্য হলেও এসব বইয়ের অনেক প্রয়োজন। কারণ, গত ১৫ বছরে আমাদের জ্ঞানের রাজ্যে অনাচার চলেছে। এটি এমন একটি শূন্যতা তৈরি করেছে, আমরা বলতে পারি জ্ঞানের রাজ্যে একটি জেনোসাইড (গণহত্যা) হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলেন যে, নন-ফিকশন বইয়ের বাজার অত্যন্ত সীমিত। আমার কাছে এমনটি মনে হয় না। তবে এমন আয়োজন (বই মেলা) নন-ফিকশন বইয়ের বাজার প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখে। গত বছর নন-ফিকশন বইমেলায় আমার জীবনের একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। সেবার আমার একটি বই পুরস্কৃত হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। কারণ, আমি অত্যন্ত অপ্রীতিকর কথা বলা মানুষ, কোনো লেখক গোষ্ঠীর সঙ্গে নেই, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যাই না, শাহবাগে আড্ডা মারি না। আমার বই কীভাবে পুরস্কার পেল সেটি আমার কাছে বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল। পরে আমি বুঝতে পারলাম, বণিক বার্তার বইমেলায় সম্মাননা পুরস্কারে যেসব বিচারকরা থাকেন তারা সব দিকে নজর রাখেন।
নতুন করে কাজ করার সময় এসেছে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, আমি কিছুদিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম। তারা বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয় বই বণ্টন করেন। তাদের কাছে আমি বিগত বছরগুলোতে কি ধরনের বই কেনা হয়েছে তার একটি লিস্ট চেয়েছিলাম। এরপর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরিতে গিয়েও আমি দেখেছি, তারা কি ধরনের বই রাখেন। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং নিজে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখলাম, সেখানে কেনা বইগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশ বই হচ্ছে নন-ফিকশন। আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সেখানকার ৯৫ শতাংশ বই বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনা এবং শেখ হাসিনা এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ওপর লেখা। অর্থাৎ প্রায় সব বই পরিবার তান্ত্রিক। একটি জঘন্য অনাচার চলেছে। এসব বইয়ে কোনো গবেষণামূলক তথ্য নেই।
তিনি আরও বলেন, অপরদিকে ভালো বইগুলোকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সে সময় বিভিন্ন সংস্থার বইও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি উচ্চ আদালতের একজন সাবেক বিচারকের জন্য ছাপা উপন্যাসেও পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় সর্বাধিনায়ক এ কে খন্দকারের বইয়ের একটি তথ্যের কারণে প্রথমা প্রকাশনী তার বই পুনরায় প্রকাশ করার সাহস পায়নি। তবে এখন এসব পরিবর্তনের জন্য একটি অপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান। আমাদের এখন চেষ্টা থাকতে হবে আমরা যেন ভালো বই প্রকাশ করতে পারি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব জনাব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া (সিরাজ উদ্দিন সাথী), অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আমার বার্তা/এমই