ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি সম্পর্ক পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত আমেরিকা মহাদেশে এল নিনো আবহাওয়া ঘটনার প্রায় পাঁচ মাস পর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
নেচার ম্যাগাজিন জানিয়েছে, মশাবাহিত এই রোগ ও জলবায়ুর অবস্থার মধ্যে আরও স্পষ্ট সম্পর্ক তুলে ধরেছে গবেষণাটি। ২০২৪ সালে ওই অঞ্চলে রেকর্ড ১ কোটি ৩০ লাখ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। ডেঙ্গু চার ধরনের ভাইরাসে হয়ে থাকে, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। জ্বর, তীব্র ব্যথা এমনকি কখনও মৃত্যুও ঘটাতে পারে এটি।
গবেষকরা ১৪টি দেশের প্রায় তিন দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাতে দেখা যায়, পুরো অঞ্চলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ওঠানামা করে প্রায় ছয় মাসের ব্যবধানে, এমনকি একে অপরের থেকে ১০ হাজার কিলোমিটার দূরের এলাকাগুলোতেও একই ধারা লক্ষ করা গেছে।
গবেষণার সহলেখক এবং ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো স্কুল অব পাবলিক হেলথের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ তালিয়া কোয়ান্ডেলেসি বলেন, “এ ফলাফল কোনো অঞ্চলে কখন ডেঙ্গু মহামারি দেখা দিতে পারে তা অনুমান করতে সহায়ক। যা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে কাজে লাগবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও জলবায়ুর যোগসূত্র আগে থেকেই জানা ছিল। তবে এই গবেষণা দেখিয়েছে মহাদেশজুড়ে সেটি কীভাবে কাজ করে, বিশেষ করে এত বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর অঞ্চলে।
কোয়ান্ডেলেসি ব্যাখ্যা করেন, উষ্ণ আবহাওয়ায় ডেঙ্গু ভাইরাস দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রা বেশি হলে মশার দেহে ভাইরাসের ইনকিউবেশন সময়ও কমে যায়। তার ভাষায়, “তাপমাত্রা যত বেশি হয়, ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ তত কার্যকর হয়।”
তবে জলবায়ুই একমাত্র কারণ নয়। জনগোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শহুরে বস্তির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশও বড় ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মারসিয়া ক্যাস্ট্রো।
তিনি বলেন, “এল নিনোর মতো চরম আবহাওয়া কীভাবে প্রভাব ফেলে তা বিশ্লেষণ জরুরি। তবে বিশেষ করে আর্বোভাইরাসের ক্ষেত্রে স্থানীয় শহুরে বৈশিষ্ট্যগুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে। যখন শহরে অবকাঠামো থাকে না, বস্তি বাড়তে থাকে— তখন এল নিনোর মতো আবহাওয়া পরিস্থিতি এসে সেই সমস্যাগুলো আরও বাড়িয়ে তোলে।”
আমার বার্তা/জেএইচ