রাশিয়ান তরুণী ভিক্টোরিয়া ডেগতারেভা (৩৫) পেশায় রূপবিশারদ (বিউটিশিয়ান)। কর্মক্ষেত্র আমেরিকা। শখ বিভিন্ন দেশের খাবারের স্বাদ গ্রহণ ও ঐতিহ্য দেখে বেড়ানো। সুযোগ পেলেই তিনি চলে যান বিভিন্ন দেশে। রুশ এই তরুণী শুধু বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে এবার এসেছেন পাবনায়।
শনিবার দুপুরে জেলা শহরের একটি রিসোর্টে বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের নজর কাড়েন ভিক্টোরিয়া। রীতিমতো শাড়ি পরে হইহুল্লোড় করছিলেন তিনি। এর আগে বর–কনের গায়েহলুদ, বিয়েবাড়ির নাচ-গান, বরবরণসহ সব আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিয়েছেন তিনি। খাচ্ছেন বাঙালি খাবার। মুহূর্তেই মিশে যাচ্ছেন সবার সঙ্গে। ঘুমাচ্ছেন বিয়েবাড়ির গণঘরে। এতে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠানটিতে।
বিয়েবাড়িতে ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি জন্মসূত্রে রাশিয়ান। তাঁর বাবা ও মা রাশিয়াতেই থাকেন। কাজের জন্য ১২ বছর ধরে তিনি থাকেন আমেরিকায়। বেড়াতে তাঁর ভালো লাগে। বিভিন্ন দেশের খাবার ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করে। তাই সুযোগ পেলেই অন্য দেশে বেড়াতে যান। তাঁর সহকর্মী তনিমা ইসলামের ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে। আমেরিকায় কাজের ফাঁকে বিষয়টি জানার পরই তিনি বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর ৭ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া একাই বাংলাদেশে আসেন। পরে সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পাবনা আসেন। এর পর থেকেই বিয়ে নিয়ে মেতে আছেন। গত বুধবার কন্যার গায়েহলুদ, বৃহস্পতিবার বরের গায়েহলুদ, শুক্রবার বিয়ের অনুষ্ঠান ও শনিবার বৌভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
ভিক্টোরিয়া জানান, মিসর, গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তিনি গেছেন। তবে বাঙালি বা ইন্ডিয়ান কালচার সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। তাই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। দুজন মানুষের একসঙ্গে হওয়ার জন্য এত আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছেন ভিনদেশি এই তরুণী। তিনি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি মেয়েদের মতো সাজার চেষ্টা করেছেন। প্রতিদিন শাড়ি পরছেন। শাড়ি পরতে তাঁর ভালো লাগছে।
ভিক্টোরিয়া ডেগতারেভা বলেন, বিয়েবাড়িতে গেট ধরে বরের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঐতিহ্য রাশিয়াতেও আছে। তবে বাংলাদেশেরটা ভিন্ন লাগছে। বড়–ছোট সবাই এক হয়ে গিয়েছিল। বর–কনের গায়েহলুদ থেকে শুরু করে পুরো আনুষ্ঠানিকতাটাই বেশ রঙিন ছিল। এটা তাঁকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের খাবার তাঁর ভালো লেগেছে। তবে সবচেয়ে মজা পেয়েছেন খিচুড়ি খেয়ে। তাঁর দৃষ্টিতে বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালো। তাঁরা মিলেমিশে থাকেন। অনেক মানুষ একসঙ্গে আনন্দ করেন। এই আনন্দে যোগ দিতে পেরে তিনিও বেশ আনন্দিত।
বিয়েবাড়ির আয়োজকেরা জানান, দেখতে অন্যদের চাইতে ভিক্টোরিয়া আলাদা। কনের গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে তিনি নীল রঙের শাড়ি পরেছিলেন। বরণডালা হাতে অনুষ্ঠানে গেছেন। বিয়ের প্রতিটি পর্বেই তিনি শাড়ি পরেছেন। সবার সঙ্গে মিশে ছিলেন। প্রচুর ছবি তুলেছেন, ভিডিও করেছেন। ছোট-বড় সবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন।
বিয়ের অনুষ্ঠানের বরের বোন ও ভিক্টোরিয়ার সহকর্মী তনিমা ইসলাম বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া তাঁদের চমকে দিয়েছে। একাই বাংলাদেশে চলে এসেছে। এরপর পাবনায় এসে তাঁদের সঙ্গে মিশে গেছে। বাড়িতে যা রান্না হচ্ছে, তা–ই খাচ্ছে। সবার সঙ্গে মিলে আছে। সে যে আমেরিকা থেকে আসছে, তা বোঝাই যাচ্ছে না। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে তার দেশে যাওয়ার কথা ছিল। এরপর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কথা শুনে বলছে, কয়েক দিন পরে যাবে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি সে দেখবে বলে জানিয়েছে।’
তনিমা ইসলাম আরও বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া আসার পর প্রথমে খুব টেনশনে ছিলাম। বিশেষ করে খাবার নিয়ে। এখন দেখছি সে সব খাচ্ছে। যে কোনো দিন হাত দিয়ে খায় না, চামচ দিয়ে খায়। সে সবার সঙ্গে হাত দিয়ে খাচ্ছে।’ বর তানভির ইসলাম বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানে ভিক্টোরিয়ার এই আগমন পুরো আয়োজনটাকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। সবাই তার সঙ্গে ছবি তুলছে। সেও সবার সঙ্গে ছবি তুলছে। সবার সঙ্গে হাসি–আনন্দে মেতে আছে। এটা সবার ভালো লেগেছে। আমরা তার এই আনন্দে নিজেরাও আনন্দ বোধ করছি।’
আমার বার্তা/এল/এমই