দীর্ঘ এক সপ্তাহের উত্তেজনা, কর্মবিরতি ও প্রশাসনিক টানাপোড়েন শেষে আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব সংগ্রহের শেষ দিনে একদিকে যেমন সচল হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের প্রধান কাস্টম হাউজগুলো, তেমনি দায়িত্বে ফিরেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
এই প্রেক্ষাপটে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান জানালেন তার প্রত্যাশার কথা-আগামীর এনবিআর যেন আর কখনো এমন অচলাবস্থার মুখে না পড়ে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, ভবিষ্যতে এমন সমস্যায় আর পড়তে হবে না। সবাই যদি অতীতের মতো আন্তরিকতা ও দক্ষতা নিয়ে কাজ করে, তবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।’
তিনি জানান, সোমবার সকাল পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আরও কিছু রাজস্ব জমা হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত হিসাব পেতে ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগবে, তবে আমরা আশাবাদী যে গত বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেশি হবে।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, গত কয়েক দিনের অচলাবস্থার কারণে রাজস্ব সংগ্রহের গতি কিছুটা ধীর হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি, যা পরে সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবাই যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে, তাহলে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন নয়।,
প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহ ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। সরকারের কঠোর অবস্থানের পর রবিবার রাতে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। পরদিন সোমবার সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি জানান, কর্মস্থলে স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছে। কাস্টমস হাউজগুলো আগের দিন বিকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে। কর, ভ্যাট ও কাস্টমস সব শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্বে ফিরে গেছেন।
এর আগে রবিবার রাতে তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার বৃহত্তর স্বার্থে শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
দপ্তরে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য :সোমবার সকাল থেকেই এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ দপ্তরে কাজে যোগ দেন। সকাল ৯টার দিকে সবাই অফিসে হাজির হয়ে নিয়মিত কাজ শুরু করেন। এনবিআর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউজ, ভোমরা, বুড়িমারী, সোনা মসজিদ ও আখাউড়াসহ দেশের সব শুল্ক স্টেশনে আবারও আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু হয়েছে।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সকালের পর থেকেই সব কর্মকর্তা তাদের ডেস্কে কাজ করছেন। কেউ কেউ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়েও আলোচনা করছেন। আন্দোলনে যুক্ত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে তারা দীর্ঘ দেড় মাস ধরে আন্দোলন করেছেন। তবে নেতাদের মধ্যে এখন বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সচল চট্টগ্রাম বন্দর : শাটডাউন কর্মসূচির কারণে শনিবার সকাল থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কার্যত অচল ছিল। কাস্টমস হাউজ বন্ধ থাকায় কোনো পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ হয়নি। কারণ কাস্টমসের অনুমোদন ছাড়া বন্দরের কার্যক্রম এগোয় না।
তবে সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর আবার পুরোদমে সচল হয়ে ওঠে। জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো এবং বেসরকারি ডিপো থেকে রপ্তানি কনটেইনার বন্দরে এনে জাহাজে তোলার কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলন প্রত্যাহারের পর রবিবার রাতেই রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন শুরু হয়। পরে সোমবার সকাল থেকে অন্যান্য অনুমোদন ও নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হয়। দুই দিন পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ থাকায় কিছুটা জট তৈরি হলেও এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
আমার বার্তা/এল/এমই