মিশর ও জর্ডান দাবি করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের পরিকল্পনা থেকে বিরত রাখতে সফল হয়েছে। এমনকি, মিশরীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজা নিয়ে তাদের প্রস্তাবিত যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা সমর্থন করেছে ওয়াশিংটন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিশরীয় ওই কর্মকর্তা বলেন, আরব বিশ্বের সমর্থনে মিশর গাজা নিয়ে একটি বিকল্প পরিকল্পনা তৈরির কাজ করছে। এরই মধ্যে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে ট্রাম্পকে জানানো হয়েছে ও তিনি এতে সম্মতি দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর ওয়াশিংটন সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা ট্রাম্পকে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে সাহায্য করেছে। বাদশাহর সঙ্গে ট্রাম্পের রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। কায়রো ও আরব বিশ্ব ট্রাম্পের সঙ্গে জর্ডানের বাদশাহর বৈঠকটিকে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছে।
ট্রাম্পের গাজা উপত্যকা দখলের প্রস্তাব নিয়ে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোনো সমালোচনা করেননি। তবে মিশরের কর্মকর্তা বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহ ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে সতর্ক করে বলেছেন, এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে ‘ইসলামি উগ্রপন্থাকে’ উসকে দিতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত হবে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষের সরকারগুলো টালমাটাল অবস্থায় পড়ে যেতে পারে।
মিশরের কর্মকর্তা আরও বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহর বক্তব্য খুব ‘নোযোগ এবং সহানুভূতির সঙ্গে শোনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয় আবদুল্লাহর বৈঠকের সুফলকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি কায়রো। তারা আরও জীবিত ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করতে গাজার ক্ষসতাসীন হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায়। এতে সাফল্যও আসে। অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে আরও পাকাপোক্ত করতে এই জিম্মি মুক্তি বেশ কাজে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, হামাস মিশরের জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তবে এতে তাদেরও একটি শর্ত বাস্তবায়ন হতে চলেছে। বিনিময়ে গাজার পুনর্গঠনে ভারী যন্ত্রপাতি উপত্যকায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল।
পাশাপাশি ইসরায়েল গাজায় ভ্রাম্যমাণ বাড়ি ঢোকারও অনুমতি দিয়েছে। এর আগে এসব ভ্রাম্যমাণ বাড়ি গাজায় ঢুকতে বাধা দিয়েছিল ইসরায়েল। এছাড়া হামাস অভিযোগ তুলেছিল, ইসরায়েল গাজায় খাদ্যসহায়তা ঢুকতে না দিয়ে অস্ত্রবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করছে। এ জন্য জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দিয়েছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সংগঠন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে যেতে পারেন। গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী সরকার কেমন হবে, সেটা নিয়ে তিনি সেখানে আলোচনা করবেন।
>> গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা
মিশরের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার নতুন প্রশাসন বা সরকার গঠনের স্বার্থে হামাস সরে যেতে রাজি হয়েছে। তবে সংগঠনটির শর্ত একটাই এবং তা হলো- পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কোনো সদস্য এই প্রশাসনে থাকতে পারবেন না।
মিসরের যুদ্ধ–পরবর্তী গাজা পরিকল্পনায় হামাস বা পিএর কোনো কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি। পিএ পুলিশ বাহিনীর যে অংশ ২০০৭ সাল থেকে গাজায় দায়িত্ব পালন করছে, তারাই গাজা পরিচালনায় কাজ করবে। গাজায় ২০০৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে হামাস সরকার গঠন করেছিল।
মিডল ইস্ট আইয়ের গত মে মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গাজার ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের প্রশ্নে হামাস কিছুটা ‘নমনীয়’ থাকবে। তাদের শর্ত হচ্ছে, গাজায় সরকার গড়বে ফিলিস্তিনিরাই। যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের আরোপিত সরকার এখানে হবে না।
তবে কথা হচ্ছে, গাজা উপত্যকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে কারা থাকবে। যেমন লেবাননে গৃহযুদ্ধের পর ১৯৯০ সালে নতুন সরকার গঠিত হয়। তবে হিজবুল্লাহ সশস্ত্র অবস্থায় রয়ে গেছে এবং রাষ্ট্রের বাইরে আলাদা সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মিসরের ওই কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, লেবাননের মতো পরিস্থিতি যাতে এখানে না হয়, সে বিষয়টি উপসাগরীয় দেশগুলো নিশ্চিত করতে চায়। এ কারণে ‘গাজা উপত্যকায়’ তাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকবে। গাজার পুনর্গঠনে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা এই ভূমিকা পালন করে যাবে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের পুনর্গঠনে পাঁচ হাজার কোটি ডলার লাগবে। প্রথম তিন বছরে লাগবে কমপক্ষে দুই হাজার কোটি ডলার। -- সূত্র: মিডল ইস্ট আই
আমার বার্তা/এমই