ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগের সামনে থেকে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চম্পা বেগম (৩৩) নামে দালাল চক্রের এক নারী সদস্যকে আটক করেছে আনসার সদস্যরা।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা তিনটার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে থেকে অভিযুক্ত ওই নারীকে আটক করা হয়।
ভুক্তভোগী রোগীর খালা রাশিদা বেগম জানান, আমরা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার দরিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। আমার ভাগ্নি সেলিমা বেগম (৪৭) হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে গত ১৭ ই ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বিকেলের দিকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। পরে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক আমার ভাগ্নিকে সিটি স্কেনের পরামর্শ দেন। আমরা ঢাকা মেডিকেলে সিটি স্ক্যানের জন্য টাকাও জমা দিয়েছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ করে ওই নারী ঢাকা মেডিকেলের স্পেশাল হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানাই সিটি স্কেনে অনেক জনের সিরিয়াল রয়েছে। আপনাদের রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার সাথে চলেন আমি বাইরে থেকে আপনাদের সিটি স্ক্যান করিয়ে দিব কম টাকায়। একথা বলে সে কাঁটাবনের 'হোম কেয়ার' নামক একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় আমাদেরকে। সেখানে একদিন রেখে কোন চিকিৎসা পত্র না করেই আমার ভাগ্নিকে আই সি ইউ সাপোর্ট দেয়া হয়েছে এই কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করে ওই নারীর মাধ্যমে। পরে আমরা কোন উপায় না দেখে ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আমাদের রোগীকে পুনরায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক আমার ভাগ্নীকে ২০৪ নং ওয়ার্ডে ভর্তি দেন।
তিনি আরো জানান আজও দুপুরের দিকে জরুরী বিভাগের সামনে ওই অভিযুক্ত নারী চম্পাকে আনসার সদস্যদের সহায়তায় হাতেনাতে আটক করি। পরে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এই ধরনের প্রতারক চক্রদের পাল্লা থেকে সাধারণ রোগীরা যাতে রেহাই পায় সেজন্য আমি আইনের কাছে বিচার চাই।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মো. মোজাম্মেল বলেন, আজ বিকেলের দিকে ভুক্তভোগী এক নারী আমাদেরকে জানান, দালাল চক্রের অভিযুক্ত ওই নারী তাদেরকে ফুসলিয়ে কম খরচে ভালো চিকিৎসার নামে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। পরে তাদের কাছ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা নেন ওই নারী সদস্য। এই অভিযোগের ভিত্তিতে জরুরী বিভাগ থেকে অভিযুক্ত দালাল চক্রের সদস্য চম্পা বেগমকে আটক করি। একপর্যায়ে অভিযুক্ত চম্পা বেগম ঢাকা মেডিকেল থেকে রোগী ফুসলিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে। পরে তাকে আমরা ঢাকা মেডিকেলের পুলিশ ক্যাম্পে হস্তান্তর করি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হোম কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক শুভ জানান,তারা আমাদের এখানে এসেছিল ঠিকই কিন্তু তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয়নি। আমরা হাসপাতালে কোন বিল করলে আমরা তার মানি রিসিট দিয়ে দেই। তিনি আমাদের সিটি স্ক্যান বাবদ ৩০০০ টাকা এবং হাসপাতালে কয়েক ঘন্টা ছিল সেই বিল দুই হাজার টাকা মোট পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমরা যদি ওনার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে থাকি তাহলে উনি মানি রিসিট দেখাতে হবে। দিলেন মাত্র ৫ হাজার সেটিকে তিনি ৩০ হাজার বলছেন এটি আমাদের হাসপাতালে জন্য বদনাম। আমাদেরকে যদি ৩০ হাজার টাকা উনি দিয়ে থাকে এবং মানি রিসিট দেখাতে পারে তাহলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন কত টাকা খরচ হবে সেটি জানার পর তারা জানান আমরা গরিব মানুষ এত টাকা দিতে পারব না বলে তারা আবার হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে চলে আসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, আজ বেলা তিনটার দিকে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত আনসার সদস্যের পিসি মো. মোজাম্মেল অভিযুক্ত দালাল চক্রের নারী সদস্য চম্পাকে আটক করে আমাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসে। এই ঘটনায় নির্দিষ্ট বাদী থাকায় আমরা বিষয়টি শাহবাগ থানা পুলিশকে জানিয়েছি। ইতিমধ্যেই শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. একরামুল আমাদের ক্যাম্পে এসেছেন। আমরা অভিযুক্ত দালাল চক্রের ওই নারী সদস্যকে বাদিসহ তাদের হাতে তুলে দিয়েছি।
এবিষয়ে থানা কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
আমার বার্তা/এম রানা/এমই