‘ডিম-দুধ খাওয়া তো ছেড়ে দিতে হয়েছে দামের কারণে। ৪০ টাকা ডিমের হালি এখন ৫০ টাকা। শাক খাবেন, তারও উপায় নেই। ২০ টাকার নিচে কোনো শাকের আঁটি পাওয়া যায় না। গরিব মানুষ খুব কষ্টে আছে। বাজার করতে তাদের নাভিশ্বাস উঠছে।’
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মালিবাগ বাজারে এসে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন ক্রেতা আমির হোসেন। শুধু তিনি নন, বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সংসারের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার মতো অসংখ্য সীমিত আয়ের মানুষ। কারণ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চড়া দামে চাল, সবজি, মাংস ও মাছ কিনছেন ক্রেতারা। এবার সেই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় যুক্ত হয়েছে আটা, ময়দা, মসুর ডাল ও চা পাতার মতো আরও কিছু প্রয়োজনীয় মুদিপণ্য।
মালিবাগ বাজারে পণ্য কিনতে আসা অটোরিকশাচালক সুমন হোসেন জানান, এক বেলায় তার ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। এই পুরো টাকা দিয়েও একদিনের বাজার হয় না। চাল-তেল কেনার পর মাছ বা মাংস কিনতে গেলে সবজি নিতে পারেন না। যে দিন আবার পেঁয়াজ, আদা বা রসুন লাগে, ওই দিন মাছ কিংবা মাংস কেনা যায় না। এভাবে টেনেটুনে কত দিন চলা যায়-প্রশ্ন রাখেন তিনি।
রাজধানীর মালিবাগ ছাড়াও রামপুরা ও মেরুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম এখনো বাড়তি। অবশ্য গত দুই সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক–দেড় টাকা কমেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট ৭২-৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইলের দাম ৭৫-৯৫ টাকা। এছাড়া ব্রি-২৮ চাল ৬২ টাকা ও মোটা ধরনের স্বর্ণা চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে এখন এক কেজি প্যাকেটেজাত আটা কোম্পানি ভেদে ৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা। খোলা আটার দাম ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। একইভাবে বিভিন্ন কোম্পানির ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-৭৫ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়।
ভালো মানের মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন দাম উঠেছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। প্রতি প্যাকেট চায়ের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চড়া দামে আটকে থাকা সবজির বাজারে খুব একটা হেরফের নেই। প্রতি কেজি বেগুণ ১০০-১৪০, করলা ৯০-১০০, কচুর লতি ৮০-১০০, ঢ্যাঁড়স ৭০-৮০, কচুমুখি ৫০-৬০, পেঁপে ৩০-৪০ এবং চিচিঙ্গা ও ঝিঙে ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রায় এক মাস ধরে কাঁচা মরিচের দাম বাড়তি। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৬০ টাকা কেজি।
আমদানি বেশি হলেও পেঁয়াজের দামে সেভাবে কমেনি। এখনো খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। যদিও কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা। যেখানে দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তালতলা বাজারের বিক্রেতা বুলু মিয়া বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ-মরিচের দামও বেশি। ফলে এ আমদানি দাম কমায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না।
তবে বাজারে রসুনের দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি আগে ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ১৫০-১৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকার মধ্যে। সোনালি মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকা কেজি দরে। আগের সপ্তাহেও একই দামে এগুলো বিক্রি হয়েছে। মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা দরে।
বিক্রেতারা বলছেন, ডিমের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ডজনে ৫ টাকা কমেছে। তবে এক হালি ডিম কিনলে ক্রেতাদের ৫০ টাকাই গুনতে হচ্ছে। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে দাম আগের মতোই রয়েছে।
আমার বার্তা/এমই