রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং কর্মচারীদের স্মরণে রোববার (৩ আগস্ট) আয়োজন করা হয় শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের।
এই আয়োজন ঘিরে অডিটোরিয়ামে তৈরি হয় আবেগঘন পরিবেশের। নিহতদের জন্য দোয়া করতে গিয়ে কেঁদেছে। শিক্ষকরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক পরিবেশের। এদিন সকাল ১০টা থেকেই শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে শুরু করে। কলেজের প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে বিধ্বস্ত স্কুল ভবনের চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরা এলাকা। এই ভবনের শ্রেণিকক্ষেই ক্লাস করত নিহত অনেক শিক্ষার্থী।
আজ সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ধাপে কলেজ অডিটোরিয়ামে শুরু হয় শোকসভা ও মিলাদ মাহফিল। কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। প্রথমে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, এই দুর্ঘটনা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। আমরা কেবল শিক্ষার্থী হারাইনি, হারিয়েছি পরিবারের সদস্যদের। এই শোক কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়, কিন্তু একে অপরের পাশে থাকলে আমরা সহজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ বলেন, এই শোক কেবল সংখ্যা দিয়ে বোঝানো যাবে না। এই শোক কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়। কিন্তু আমরা যদি একে অপরের পাশে থাকি, তাহলে এই দুঃসময় থেকেও বেরিয়ে আসতে পারব। একা কোনো পরিবার, কোনো বন্ধু বা সহপাঠী নয়- আমরা সবাই এই ব্যথার ভাগীদার।
এই ঘটনার পর অনেকে এখনো ট্রমাটাইজ। আমরা কলেজ প্রশাসন থেকে চেষ্টা করছি সবার কাছে পৌঁছাতে। যাদের মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন, আমরা পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি। তবে শুধু আমাদের পক্ষ থেকে নয়, তোমরাও তোমাদের বন্ধুদের খোঁজ নাও। যে কারও আচরণে পরিবর্তন দেখলে সেটা জানাও। আমরা যেন একে অপরকে হারিয়ে না ফেলি।
অধ্যক্ষ বলেন, আমরা চাই না কেউ একা হয়ে যাক। এ রকম দুর্ঘটনার পর একজন মানুষ কিভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তিনি জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য কাউন্সেলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। প্রয়োজনে অভিভাবকদেরও কাউন্সেলিংয়ে যুক্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কলেজে পাঠদান বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পাস সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে। এই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে চাই। তবে সেটি হবে ধাপে ধাপে, শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে।
এরপর শুরু হয় বিশেষ মোনাজাত। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় সবাই হাত তোলে দোয়া করার সময় অনেক শিক্ষার্থীকে কাঁদতেও দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ তিন দফায় ছুটি ঘোষণা করে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এর মধ্যেই চালু ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম, আহতদের সহায়তায় গঠন করা হয় একটি কন্ট্রোল রুম।
আমার বার্তা/এল/এমই