হাশরের মাঠ থেকে বের হয়ে গন্তব্যে যেতে একটি পুল স্থাপন করা হবে। আরবিতে পুলকে বলা হয় সিরাত। সিরাত হাশরের ময়দান থেকে জাহান্নামের ওপর দিয়ে জান্নাত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে এবং অনেক ভয়ঙ্কর হবে।
মানুষের আমলনামা ওজন এবং হিসাব-নিকাশের পর সবাইকে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে পুলসিরাত দেখিয়ে দিয়ে বলবেন, ‘এটা তোমাদের গন্তব্যে পৌঁছার পথ। এ পুল পেরিয়েই তোমাদের যেতে হবে।’
কিন্তু সবার জন্য পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। পাপী বান্দারা সেটাকে চুল থেকেও চিকন দেখতে পাবে। তাদের জন্য সেটি হবে অত্যন্ত ধারালো। তারা ওই পুলে আরোহণ করা মাত্রই তাদের পা কেটে নিম্নস্থ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর নেককারদের জন্য হবে সুপ্রশস্ত সুগম পথ। তারা তাদের নেকির তারতম্য অনুযায়ী গতিতে জান্নাতে পৌঁছে যাবে।
ফারসি পুল অর্থ সেতু। আরবি সিরাত অর্থ পথ। ইসলামের পরিভাষায় পরকালের একটি বিশেষ সেতুকে পুলসিরাত বলা হয়। পরকালে সব মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করে হাশরের ময়দানে সমবেত করা হবে এবং কর্মফল দেওয়া হবে। এর পর হাশরের মাঠ থেকে এই বিশেষ সেতু হয়ে জান্নাতের দিকে যেতে হবে।
কোরআন-হাদিসে পুলসিরাত বোঝানোর জন্য শুধু সিরাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। উর্দু-ফারসি পরিভাষা থেকে বাংলায় পুলসিরাত শব্দটি এসেছে।
পবিত্র কোরআনে এ-সংক্রান্ত আলোচনায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমার রবের কসম, আমি অবশ্যই তাদের ও শয়তানদের (হাশরের মাঠে) সমবেত করব, এরপর জাহান্নামের চারপাশে নতজানু অবস্থায় তাদের উপস্থিত করব। তারপর প্রত্যেক দল থেকে পরম করুণাময়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অবাধ্যকে আমি টেনে বের করব। আমি পরিপূর্ণ অবগত তাদের সম্পর্কে, যারা জাহান্নামে দগ্ধ হওয়ার অধিকতর যোগ্য। এবং তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যাকে এই পুলসিরাত পার হতে হবে না। এটা তোমার প্রতিপালকের অবধারিত ফয়সালা। সেদিন আমি তাকওয়া অবলম্বনকারীদের নাজাত দেব। আর জালিমদের আমি সেখানে রেখে দেব নতজানু অবস্থায়।’ (সুরা মারিয়াম: ৬৮-৭২)
যাদের আমলের পরিমাণ বেশি তারা অতি দ্রুত চোখের পলকের মতো পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। আর যার আমল কম তারা হামাগুড়ি দিয়ে পার হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘সেদিন তুমি ইমানদার পুরুষ ও নারীদের দেখতে পাবে যে, তাদের সামনে ও ডান পাশে তাদের আলো ছোটাছুটি করছে। বলা হবে—আজ তোমাদের সুসংবাদ হলো জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়, সেখানে তোমরা চিরস্থায়ী হবে। এটাই হলো মহাসাফল্য।...’ (সুরা হাদিদ: ১২)
আমার বার্তা/জেএইচ