জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, আমাদের পার্টি অফিসে বারবার হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা কেবল একটি রাজনৈতিক দলের ওপর আক্রমণ নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং আইনের শাসনের ওপর নগ্ন আঘাত। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ, মর্মাহত ও ব্যথিত। এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনা সভায় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে তারা সম্পূর্ণরূপে অক্ষম প্রমাণিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা দেখে মনে হয় দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই।
তিনি বলেন,আমরা সতর্ক করে দিতে চাই, আইন-শৃঙ্খলার এ ধারাবাহিক অবনতি চলতে থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অসাধু চক্র এভাবে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, আর সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে—এটি জাতির জন্য ভয়াবহ সংকেত।
ব্যারিস্টার আনিস আরও বলেন, আমরা সবাই পল্লীবন্ধু এরশাদের সারথি। আর পল্লীবন্ধু এরশাদের গড়া দল জাতীয় পার্টি। এই জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা প্রতিনিধিরা নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা বিবৃতি দিয়ে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর জন্য।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অতিউৎসাহী কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল গোষ্ঠী পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টির কার্যালয় আগুন দিয়েছে। তারা তারা শুধু পার্টি অফিসে আগুন দেয়নি, আগুন দিয়েছে নামাজের ঘরে, পবিত্র কুরআনে। এ ঘটনায় একজন এরশাদ প্রেমিক রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে শুধু নয়, একজন মুসলমান হিসেবে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
এই জঘন্য ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। পল্লীবন্ধু এরশাদ, এ দেশের ইসলামের জন্য যে অনন্য অবদান রেখেছেন তা আর কোনো সরকার রাখতে পারিনি। পল্লীবন্ধু এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছিলেন, শুক্রবারে সরকারি ছুটি দিয়েছিলেন, মসজিদে বিদ্যুতের বিল মওকুফ করেছিলেন। আজ আর সেই এরশাদের পার্টির কার্যালয়ে নামাজের ঘরে আগুন জ্বালানো হয়েছে। যা প্রতিটি মুসলিমের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিরোধে নিরাপত্তা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে সেজন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এর আগেও সেনাবাহিনী এবং পুলিশ জাতীয় পার্টির অফিসকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করেছে। সেজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
হাওলাদার আরও বলেন, কি কারণে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্মৃতি বিজড়িত এই জাতীয় পার্টির অফিসের উপর বারবার হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক ভাবে তারা কি আমাদের শত্রু? আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তারা আমাদের শত্রু নয়। তাছাড়া রাজনীতিতে কেউ চিরশত্রু নয়। মত পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বিশেষের অপরাধের দায় পুরো জাতীয় পার্টির পরিবার নিতে পারে না।
রাজনীতিতে সহনশীলতার বড় অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে হয় রাজনীতি দিয়ে। রাজনীতি কোনোভাবেই সহিংস কর্মকাণ্ড দিয়ে মোকাবিলা করা যায় না। জাতীয় পার্টি সব সময় শান্তি, উন্নয়ন অগ্রগতির, সাম্য, প্রগতি ও উদার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি।
আমার বার্তা/এমই