সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. আশরাফুল হুদা বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে গোপালগঞ্জে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সহিংসতা এড়ানো যেত। তার মতে, গোয়েন্দা তৎপরতার অভাবই এই ঘটনার মূল কারণ।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ’ শীর্ষক এই বিতর্ক অনুষ্ঠানে আশরাফুল হুদা বলেন, "জুলাই চেতনা নস্যাৎ করে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যাতে করে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া যায়।"
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে ডিসেম্বরের মধ্যেই সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হতো। সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের প্রতিক্রিয়া দেরিতে এসেছে, যা হতাশাজনক। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার আগেই পুলিশকে সক্রিয় হতে হতো।”
সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, "মব সন্ত্রাসের অনেক ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটানো হয় যাতে বিএনপিকে দায়ী করা যায়। এ ধরনের অস্থিরতা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই ব্যবহার করা হচ্ছে।"
অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, “মব সন্ত্রাস এখন জাতীয় জীবনে একটি ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এটি শুধু সামাজিক স্থিতিশীলতাই নয়, দেশের গণতন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও হুমকির মুখে ফেলছে।”
তিনি বলেন, ১/১১-এর ‘লগি বৈঠা’ কাণ্ড থেকেই এই মব সন্ত্রাসের সূচনা হয়েছিল এবং সেই নির্মম ঘটনার বিচার আজও হয়নি। বর্তমানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং দীর্ঘসূত্রিতা মব জাস্টিসকে উৎসাহ দিচ্ছে।
মব সহিংসতা রোধে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরে। এগুলো হলো:
১. রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিশ্চিত করা
২. বিচার ব্যবস্থার জটিলতা দূর করে স্বচ্ছ কাঠামো গঠন
৩. নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তৈরি করে জনসচেতনতা বাড়ানো
৪. গুজব ও ঘৃণাপূর্ণ কনটেন্ট দমনে সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি
৫. নির্বাচনী ইশতেহারে মব সন্ত্রাস বিরোধী প্রতিশ্রুতি
৬. অর্থনৈতিক ভারসাম্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানসম্মত শিক্ষা
৭. গণমাধ্যমকে আরও কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করা।
ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিকে হারিয়ে বিজয়ী হয় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বিতার্কিক দল। অনুষ্ঠানে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।