আগামী শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি ‘ফাঁস’ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, ফাঁস হওয়া পাণ্ডুলিপি দিয়ে নোট ও গাইড বই ছাপার অভিযোগও পেয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নোট ও গাইড বই না ছাপাতে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধ করে নোটিস জারি করেছে এনসিটিবি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, কেউ (মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান) যদি সারাদিন নোট-গাইড ছাপিয়ে বলে কাগজ সংকটের কারণে পাঠ্যবই ছাপতে পারছি না, এমনটি যাতে না হয় তাই ওই নোটিস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ে বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে না পারা মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান এনসিটিবির শিক্ষাক্রম উইংয়ের সদস্য অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হাতে পাওয়া পাণ্ডুলিপির সিডি ব্যবহার করে নোট-গাইড ছাপানোর কাজ শুরু করতে পারে। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা সিডিতে বইয়ের সফট কপি দিচ্ছি। সেনাবাহিনীকেও সিডি দেওয়া হয়েছে। প্রিন্টার্সদের মধ্যে কেউ যদি তা ফাঁস করে দেন বা নিজেরাই নোট-গাইড ছাপানোর কাজ শুরু করেন সেক্ষেত্রে আমরা কী করব?
তিনি আরও বলেন, আমরা অভিভাবক বেশে মার্কেটে মার্কেটে খোঁজ নিয়েছি। এখনও আগামী বছরের নতুন বইয়ের নোট-গাইড বাজারে আসেনি। বিক্রেতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে এসব বই পাওয়া যাবে। তারা এখন বার্ষিক পরীক্ষার নোট-গাইড নিয়ে ব্যস্ত।
নোট-গাইড বন্ধে এনসিটিবি কোনো উদ্যোগ নেবে কি না জানতে চাইলে এনসিটিবির শিক্ষাক্রম উইংয়ের এই সদস্য বলেন, কিছু নিষিদ্ধ হলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে নির্বাহী বিভাগ বা আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমাদের এ বিষয়ে করার তেমন কিছু নেই।
অনেকগুলো পর্যায় থেকে পাণ্ডুলিপি ফাঁস হতে পারে বলে ধারণা করছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান। তিনি বলেন, বই পরিমার্জনের পর সেগুলো পরিমার্জনে সংশ্লিষ্টরা টাইপ করেছেন, সেগুলো আমাদের এখানেও টাইপ হয়েছে, ডিজাইন করা হয়েছে- এর কোনো একটি পর্যায় থেকে তা ফাঁস হতে পারে। যদিও আমরা সংশ্লিষ্টদের আগেই এ বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখতে বলেছি।
অন্যদিকে পাঠ্যবই ছাপানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সবাই নোট, গাইড বই তৈরিতে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আনোয়ার হোসাইন। তিনি বলেন, যাদের নোট-গাইড ব্যবসা আছে তারা এমন কাজ করতে পারে, তবে যারা শুধু প্রিন্টিংয়ের কাজ করে তারা এমনটি করে না।
নতুন শিক্ষার্থীদের বই ছাপানোর কাজ পেয়েছে ‘অনুপম প্রিন্টার্স’ নামের মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটির মূল কোম্পানি কাজল ব্রাদার্স লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটি ‘অনুপম গাইড’ প্রস্তুত ও বাজারজাত করে। নতুন বইয়ের পাণ্ডুলিপি ব্যবহার করে গাইড প্রস্তুত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে অনুপম প্রিন্টার্সের সত্ত্বাধিকারী মীর্জা আলী আশরাফ কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে অনুপম প্রিন্টার্সের গোডাউন ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পাঠ্যবই ছাপার কাজ পেয়েছি, কিন্তু গাইড ছাপার কাজ শুরু হবে, নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে যাওয়ার পর। আমরা এখনই গাইড ছাপানোর কাজ করছি না।
২০০৮ সালের ১৩ মার্চ হাইকোর্ট এনসিটিবির অনুমোদন ছাড়া নোট বই ও গাইড বই প্রকাশ, বিতরণ ও বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেশের জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়। সে রায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশকদের করা আপিল ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর খারিজ করে দিয়েছিল আপিল বিভাগ। এর আগে সরকার ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর নোট ও গাইড বই প্রকাশনা, বিতরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার।