নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে কফি পান করা হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে, যারা সকালে কফি পান করেছেন, তাদের মৃত্যু ঝুঁকি ১৬ শতাংশ এবং হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩১ শতাংশ কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সারাদিন কফি পান করার চেয়ে সকালেই এটি বেশি কার্যকর।
যুক্তরাষ্ট্রের টুলেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওবেসিটি রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত এই গবেষণাটি ৮ জানুয়ারি ‘ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নাল’-এ প্রকাশিত হয়। গবেষকরা ১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভে-তে অংশগ্রহণকারী ৪০ হাজার ৭২৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের উপর গবেষণা চালান।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের খাবার ও পানীয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তারা কফি পান করেন কি না, কতটুকু এবং কোন সময়ে পান করেন, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণার ফলাফল
- যারা সকালে কফি পান করেন, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি কম।
- দিনে যেকোনো সময় কফি পান করার চেয়ে সকালেই কফি পানের উপকারিতা বেশি।
- সকালবেলা কফি পানের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদমের ব্যাঘাত এড়ানো সম্ভব।
- ১০ বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে কফি পানকারীদের মধ্যে হৃদরোগের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
গবেষণার প্রধান, টুলেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. লু কি বলেন, কেন সকালে কফি পান হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দিনশেষে কফি পান সার্কাডিয়ান রিদম এবং মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা ব্যাহত করে। এর ফলে প্রদাহ এবং রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তিনি আরও বলেন, 'ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। আমরা পরীক্ষা করে দেখতে চাই, কফি পানের সময়সূচি পরিবর্তন মৃত্যুঝুঁকি বা স্বাস্থ্যে কী প্রভাব ফেলে।'
অতীতের গবেষণাগুলোতে পরিমিত কফি পানকে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এটি প্রথম গবেষণা যেখানে কফি পানের সময়ের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে:
- ৩৬% ব্যক্তি সকালে কফি পান করেন।
- ১৪% সারাদিন কফি পান করেন।
- সকালে কফি পানকারীরা তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে কফি পান করেন।
লন্ডনের রয়্যাল ব্রম্পটন এবং হ্যারফিল্ড হাসপাতালের অধ্যাপক থমাস এফ লুশার বলেন, 'সকালে আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবে সক্রিয় থাকে। তখন কফি পান শরীরের কার্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু দিনশেষে কফি পান অভ্যন্তরীণ ঘড়িতে বিঘ্ন ঘটায়, যা ঘুম এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।'
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সকালে কফি পান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে সারাদিন কফি পানের অভ্যাস থেকে বিরত থাকা ভালো। অতিরিক্ত কফি পানে ঘুমের ব্যাঘাত এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে পরিবর্তন** ঘটতে পারে। গবেষকরা এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন।