সামনের সারিতে যারা বসে তারাই ভালো করবে আর পিছনের সারিতে যারা বসে তারা পিছিয়ে থাকবে। এই ধারণার থেকে বের হয়ে এসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা শহরের শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বার্লো বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে ‘নো ওয়ান ব্যাকবেঞ্চার্স’ পড়াশোনার ব্যবস্থা। স্কুলের ক্লাসরুমে আর কাউকে বসতে হবে না পেছনের সারিতে। সবাই বসবে ফার্স্ট বেঞ্চে। কেউ আর অবহেলিত নয়।
সবাই ফার্স্ট বেঞ্চে, কীভাবে সম্ভব? প্রশ্নের উত্তরে স্কুলের এক শিক্ষিকা বললেন, ‘এই বিষয়টি আমাদের ডিআই স্যারের মস্তিষ্কপ্রসূত। আসলে কেরালার স্কুলগুলোতে ক্লাসে বসার চিরকালীন ব্যবস্থাটাই পাল্টে দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই আমরা কেরালার পথ অনুসরণ করতে চলেছি।”
তিনি আরো বলেন, “সাধারণত ক্লাসরুমে পরপর বেঞ্চগুলো বসানো থাকে। ফলে কাউকে না কাউকে পিছনের দিকে বসতেই হয়। তাই পিছনের সারিতে বসা পড়ুয়ারা অনেকসময় পড়াশোনা বুঝতে পারে না। আবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পিছনের বেঞ্চে বসা পড়ুয়াদেরও নজরে রাখা সম্ভব হয় না। তাই এখন থেকে ক্লাসরুমে বেঞ্চ সাজানো হবে ইংরেজি ইউ-এর মতো করে। আর তাতেই সবাই বসবে সামনের বেঞ্চে। সব পড়ুয়াকে নজরে রাখতে পারবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।”
পশ্চিমবঙ্গের মালদায় এই প্রথম ‘নো ওয়ান ব্যাকবেঞ্চার্স’ পদ্ধতিতে পড়ানো শুরু হলো। আগামীতে রাজ্যের অন্যান্য জেলার স্কুলে এই পদ্ধতিতে পড়াশোনা শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
স্কুলের শিক্ষিকারা জানান, শ্রেণিকক্ষের বসার এই নতুন ব্যবস্থাটি প্রথম দেখানো হয় একটি মালয়ালাম চলচ্চিত্রে। বিনেশ বিশ্বনাথ পরিচালিত ‘স্থানার্থী শ্রীকুত্তান’ সিনেমায় প্রথম এই পদ্ধতিতে ক্লাসরুমে বসার ব্যবস্থা দেখানো হয়েছিল। এই সিনেমায় চারজন অবাধ্য ছাত্রের কথা তুলে ধরা হয়েছিল।
তাদের পড়াশোনায় মন ফিরিয়ে আনতে ‘নো ওয়ান ব্যাকবেঞ্চার্স’ পদ্ধতি চালু করা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের বিভিন্ন সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। এরপরেই পদ্ধতিটি বেছে নিয়ে কেরালার বিভিন্ন স্কুলে শুরু হয় ‘নো ওয়ান ব্যাকবেঞ্চার্স’ পদ্ধতিতে পাঠদান।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, নতুন পদ্ধতিতে পড়াশোনা করতে তাদের খুব ভালো লাগছে। শিক্ষকদের সব কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন। এতদিন যারা পিছনের বেঞ্চে বসত, তারা সব কথা শুনতে পেত না। তাই ক্লাসের পড়া বুঝতে অসুবিধা হতো। এখন পড়া বুঝতে অনেকটাই সুবিধা হচ্ছে।
‘নো ওয়ান ব্যাকবেঞ্চার্স পদ্ধতিতে পড়াশোনা হলে কোনো সহপাঠী আর মানসিক হীনম্মন্যতায় ভুগবে না। এক কথায় ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’ টাইপের ব্যাপার। শিক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে কেরালার পর পশ্চিমবঙ্গও নতুন পথে হাঁটছে। বার্লো বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে একজন কর্মকর্তার মতে, চলচ্চিত্র থেকে শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন বাস্তব প্রভাব সত্যিই বিরল এবং অনুপ্রেরণামূলক।
আমার বার্তা/এল/এমই