বিশ্বে প্রথমবারের মতো জেনেটিক্যালি মডিফাইড (জিএম) শূকরের ফুসফুস মানবদেহে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। প্রতিস্থাপনের পর সেই ফুসফুস ৯ দিন কার্যকর ছিল। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসায় এটাকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে দেখা হচ্ছে। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর নিউইয়র্ক সিটির এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউট হাসপাতালে সম্প্রতি একজন ব্রেইন-ডেড রোগীর দেহে একটি জেনেটিক্যালি।
মানুষের হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও কিডনির মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে গেলে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় তা প্রতিস্থাপন করা যায়। কিন্তু চাহিদা সরবরাহের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বড় সংকট রয়েছে। এক্ষেত্রে জেনট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বলে একটি বিকল্প কৌশল ব্যবহার করছেন চিকিৎসকরা।
জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন হলো এক প্রজাতির জীব থেকে নেয়া অঙ্গ বা টিস্যু অন্য প্রজাতির জীবের শরীরে প্রতিস্থাপন করার প্রক্রিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী এই ধরনের প্রতিস্থাপনে চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ঘাটতি মোকবিলায় জেনোট্রান্সপ্লান্টেশনের সবশেষ প্রচেষ্টা সম্প্রতি প্রথমবারের মতো মানবদেহে শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত এটা সফল হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রোগীদের ক্ষেত্রে শূকরের ফুসফুসের সফল ব্যবহারের আগে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।
প্রতিবেদন মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর নিউইয়র্ক সিটির এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউট হাসপাতালে সম্প্রতি একজন ব্রেইন-ডেড রোগীর দেহে একটি জেনেটিক্যালি মডিফাইড শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়।
এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন ট্রান্টপ্লান্ট ইনস্টিটিউটের একজন বিশেষজ্ঞা চিকিৎসক ও সার্জন ডা. জাস্টিন চ্যান পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি এই গবেষণাটিকে ‘উত্তেজনাপূর্ণ ও প্রতিশ্রুতিশীল কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ডা. চ্যান বলেন, ‘এই অপারেশনের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে এসব ফুসফুসের স্বাধীনভাবে মানবদেহে টিকে থাকার সক্ষমতা নেই। আমাদের অপারেশন হয়তো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেনি, তবে এটি একটি দারুন এবং আশাব্যাঞ্জক কাজ ছিল।’
ডা. চ্যানের এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন, ফুসফুস প্রতিস্থাপন এবং শ্বাসতন্ত্র বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু ফিশার। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, পৃথিবীজুড়ে যেসব রোগী হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ ও কিডনির অকার্যকারিতা সমস্যায় ভুগছেন, তাদের মাত্র ১০ শতাংশ প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান এবং বেঁচে থাকতে পারেন। এর প্রধান কারণ, এসব প্রত্যঙ্গ খুবই দুর্লভ।’
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন এসব রোগীর জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। এখনও এটি প্রাথমিক অবস্থা পার করছে, তবে ইতোমধ্যেই এর অগ্রগতি ঘটেছে। এনওয়াইইউ হাসপাতালে সম্প্রতি শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপনের যে অপারেশনটি হয়েছে, সেটি জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশনের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি বড় এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রবর্তী পদক্ষেপ। এই অপারেশন আমাদের জানান দিচ্ছে যে আমরা সঠিক পথে আছি এবং এ ব্যাপারে আমাদের গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আরও বাড়তে হবে।’
গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানব দেহে পশু-পাখির প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ব্রেইন-ডেড রোগীদের পাশাপাশি অনেক সময় গুরুতর অসুস্থ ও মরণাপন্ন রোগীদেরও বেছে নেয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
তবে এসব প্রতিস্থাপনের কোনোটিই তেমন সাফল্য পায়নি। প্রতিস্থাপনের পর কয়েক ঘণ্টা, কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরেই নতুন প্রত্যঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অ্যান্ড্রু ফিশার বলেন, ‘একজন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি বলতে পারি, এই প্রত্যঙ্গটি একদিকে যেমন অক্সিজেন সরবরাহ করে, তেমনি মানদেহে রোগজীবাণুর প্রবেশও ঘটে এর মাধ্যমে। আবার প্রবেশ করা রোগজীবাণুকে প্রতিহত করার প্রাথমিক কাজটিও করে ফুসফুস। এটি খুবই স্পর্শকাতর একটি প্রত্যঙ্গ।’
আমার বার্তা/এল/এমই