নানা অজুহাতে দেশজুড়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পেঁয়াজের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫৫ টাকার পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। পাইকারি কিংবা খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পেয়াজের কোনো সংকট না থাকলেও অসাধু সিন্ডিকেটে কারসাজিতে দাম বেড়েছে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, রামপুরা বাজারসহ একাধিক খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, রোববার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া এই একই পণ্য দুই সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৫৫ টাকা।
রোববার রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারি আড়ত ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৬০ টাকা। এতে কেজিপ্রতি দাম হয় ৬৮-৭২ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও প্রতি পাল্লা ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে প্রতি কেজির দাম হয় ৫০ টাকা। সেক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে পাল্লাপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৯০-১১০ টাকা। আর কেজি হিসাবে পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৮-২২ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহ আগ থেকেই আড়তদাররা পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মৌসুমও শেষ, সঙ্গে বন্ধ আমদানিও। এতে বেড়েছে দাম। কিন্তু আড়তে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। প্রত্যেকটি আড়তে থরে থরে সাজানো আছে বস্তাভর্তি পেঁয়াজ। কিন্তু দাম বেশি। তাই বাড়তি দামে কিনে এনে বাড়তিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভালোমানের পেঁয়াজ প্রতি কেজি পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৫-৫৮ টাকা। এই মানের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। মাঝারি মানের দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৭-৬৮ টাকায়। যা ১৫ দিন আগে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৭৮ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের বৃহত্তম পাইকারি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। যেহেতু পেঁয়াজ কোনো দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এ কারণে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি সপ্তাহের ব্যবধানে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার কারণে কৃষকের সংরক্ষিত পুরোনো পেঁয়াজও বাজারে ছাড়া হচ্ছে। নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করলে দাম কমবে।
পাশাপাশি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এখন পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল বাজার। কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও পাবনাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ আসছে। সম্প্রতি ভারি বর্ষণের কারণে মোকামগুলোতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ সরবরাহ হচ্ছে না। ফলে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এছাড়া ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধি তথা পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির কারণেও দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিবছর একই প্রক্রিয়ায় পেঁয়াজে মূল্য কারসাজি করে ক্রেতাকে ঠকাচ্ছেন। তবে এর কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আমার বার্তা/জেএইচ