প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম ধরা হয়। মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে বিভিন্ন আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে। ভোলার চরফ্যাশনের মৎস্যঘাটগুলোতে জেলে ও পাইকারদের হাঁকডাকে কিছুটা সরগরম হলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। ঢাকার বাজারে গত কয়েকদিন মাছের সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি টানা বৃষ্টির কারণে ক্রেতাও কিছুটা কম। এতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। এক কেজির চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে না পারায় ইলিশের সরবরাহ কমেছে। ছুটির দিনে বাজারে এলেও আকাশছোঁয়া দাম দেখে অনেকেই ইলিশ না কিনেই হতাশ হয়ে ফিরেছেন।
খুলনার বাজারগুলোতে এ সময়ে ইলিশের দেখা মিললেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। বিশেষ করে এক কেজি ওজনের ইলিশ এখন প্রায় অনুপস্থিত।
এদিকে ভোলার চরফ্যাশনের বড় মৎস্যঘাটগুলোর মধ্যে সামরাজ, নতুন স্লুইসগেট, খেজুরগাছিয়া, মাইনউদ্দি ঘাট, ঢালচর, বকসীরঘাট, ঘোষেরহাট, চরকচ্ছপিয়া ও কুকরি মুকরি অন্যতম। কাকডাকা ভোর থেকে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয় এসব ঘাটে।
সেখানে কয়েকটি মৎস্যঘাট ঘুরে দেখা গেছে, কেউ ট্রলার থেকে ঝুড়িতে করে মাছ নিয়ে আসছে। কেউ আবার পাইকার ডাকছে, কেউ মাছ ক্রয় করে মোকামে যাচ্ছেন। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বেচাকেনা হয় ইলিশের। এখানে ইলিশের পাশাপাশি কাউয়া, ঢেলা, লইট্টা, পোয়া, জাবা কই, মেইদ, টেংরা, রূপচাঁদাসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়। সাগরের ইলিশের থেকে নদীর ইলিশের দাম তুলনামূলক বেশি। দেড় কেজি ওজনের ইলিশের হালি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এক কেজি ওজনের ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। পাঁচশ গ্রাম থেকে আটশো গ্রাম ওজনের হালি ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও মুন্সীগঞ্জের পদ্মা মেঘনা নদীতে ভরা মৌসুমেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা। ইলিশের দেখা না মেলায় এ বছর মুন্সীগঞ্জের আড়ৎ, হাট বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। মুন্সীগঞ্জের হাট বাজারগুলো ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেল সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসরিন জাহান বলেন, নদী দূষণের কারণেই নদীতে ভরা মৌসুমেও মিলছে ইলিশ। নদী দূষণ হওয়ার কারণেই মূলত ইলিশ সাগর হতে নদীতে উঠে আসছে না।
ক্রেতারা বলছেন, ইলিশের দাম বাড়তে বাড়তে এখন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
ঢাকার নিউমার্কেটের মাছবাজারে মাছ কিনতে আসা হরুন আহমদ বলেন, বাজারে মাছ কম। কিছু ইলিশ দেখলাম, তবে দাম বেশি।
খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. মনিরুল মামুন বলেন, বর্তমানে ইলিশের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। গত সপ্তাহে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে পারেনি, ফলে সরবরাহ কম। এখন জেলেরা সমুদ্র থেকে ফিরছে, আগামী সপ্তাহে দাম কিছুটা কমবে বলেও আশা করছি।
আমার বার্তা/জেএইচ