মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ত্রি-মোহনায় শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে ডুবে যাওয়া ফ্লাই অ্যাশ (সিমেন্টের কাচাঁমাল) বোঝাই কার্গো জাহাজ এমভি মিজান-১ ডুবির ৭২ ঘণ্টা পার হলেও এখনও উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়নি। এ ঘটনায় সহকারী হারবার মাস্টারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পণ্য বোঝাই কার্গোটি দ্রুত উত্তোলনের জন্য মালিক পক্ষকে বন্দর থেকে জরুরি চিঠি দিয়ে তলব করা হয়েছে।
ফ্লাই অ্যাশ ও জাহাজের মধ্যে পলি পরে ধীরে ধীরে পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে পণ্য বোঝাই এ কার্গো জাহাজটি। বাণিজ্যিক জাহাজ ও ছোট বড় নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে শুধু মাত্র একটি ভাসমান মার্কিন বয়া দিয়ে দুর্ঘটনাকবলীত স্থান চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। আর ঘটনাস্থল দেখভাল ও নজরদারি করছে বন্দর, জাহাজের নাবিক ও পণ্য আমদানি কারকদের লোকজন।
তবে দ্রুত তোলা না হলে জাহাজটি সড়ে গিয়ে বন্দরের মূল চ্যানেলে ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
জানা যায় মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজের ভেতরে থাকায় প্রায় ৯১৪ মেট্রিক টন ফ্লাই অ্যাশ নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে। ফ্লাই অ্যাশ নদীতে ভেসে গিয়ে সুন্দরবনের জলজ, বনজ ও প্রাণিজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
জাহাজের নাবিকরা বলেন, শনিবার রাতে পণ্য ও জাহাজসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি দেখিয়ে কার্গো জাহাজটির মাস্টার মো. বেল্লাল হোসেন দাকোপ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এর পরপরই বিপরীত দিক থেকে এসে আঘাত করা লাইটার জাহাজ ‘এমভি কে আলম গুলশান-২’ কে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। যত দিন এর সমাধান না হবে ততদিন পুলিশ হেফাজতে থাকবে এ লাইটার জাহাজটি।
মোংলা লাইটার ও লঞ্চ লেবার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ডুবন্ত কার্গো জাহাজটি উত্তোলন করা যাবে কিনা এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে মালিক পক্ষ, লাইটার শ্রমিক ইউনিয়ন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিনিধিরা। মালিক পক্ষের দাবি জোয়ারের পানি আর নদীর স্রোত কমলে দু’এক দিনের মধ্যে ফ্লাই অ্যাশ উত্তোলনের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
অন্য একটি কার্গো জাহাজ ওই ডুবন্ত কার্গোটি পাশে রেখে মেশিনের মাধ্যমে প্রথমে পলি ও ফ্লাই অ্যাশ সরানো হবে এবং পরে উদ্ধারকারী নৌযান নিয়ে জাহাজটি ক্রেনের সাহায্যে টেনে তোলা হবে বলে জানায় জাহাজ মাস্টার মো. বেল্লাল হোসেন। ফ্লাই অ্যাশ অপসারণ করতে প্রায় ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান জানান, কি কারণে পণ্য বোঝাই কার্গো জাহাজটি ডুবে গেলো সে বিষয় অনুসন্ধান করতে বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার পাইলট মো. বেল্লাল হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার তদন্ত কাজের সহায়ত করবে বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী (নৌ) মাহমুদুল হাসান সাগর। আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহিন রহমান।
এছাড়া ফ্লাই অ্যাশ বোঝাই কার্গো জাহাজ এমভি মিজান-১ দ্রুত উত্তোলন করার জন্য বন্দরের হারবার বিভাগ থেকে জরুরি চিঠি দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত (২৭ জুন) সকালে ভারত থেকে ৯১৪ মেট্রিক টন ফ্লাই অ্যাশ বোঝাই করে ঢাকায় সিমেন্টস ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার সময় পশুর নদীতে বিরতি করে। কিন্ত শুক্রবার সকালেই বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য একটি লাইটার জাহাজ ‘এমভি কে আলম গুলশান-২’ কার্গোটিতে আঘাত করলে ফলে তলা ফেটে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও ঘষিয়াখালী ত্রি-মোহনায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আমার বার্তা/এল/এমই