সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মর্গে (সিএমএইচ) মৃত মেয়েকে রেখে বাইরে আহাজারি করছেন মাগুরার ধর্ষণের শিকার শিশুর মা। এ সময় তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরে তিনি একটি কথা বারবার বলছেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে যারা খারাপ কাজ করেছে, তাঁদের সবার ফাঁসি চাই।’
কেউ সান্ত্বনা দিতে কাছে গেলে শিশুটির মা বলেন, ‘কখনো কখনো মনে হয়েছে মেয়েটা সুস্থ হবে। এবার বেঁচে গেলে আর কখনো বাড়ি থেকে একা ছাড়তাম না। কিন্তু আল্লাহ ডাক শোনেননি।’
স্বজনদের জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলেন, শেষ বারের মতো মা বলে আর ডাকল না তাঁকে। মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শিশুটির প্রতিবন্ধী বাবাও। তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। এর মধ্যেই তিনি ‘ধর্ষকের গোটা পরিবারসহ’ সবার ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
এ দিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ডিএনএ স্যাম্পল কালেকশন করা হয়ে গেছে, আশা করি আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে যাব। এরই মধ্যে ১২-১৩ জনের ১৬১ ধারায় (দণ্ডবিধি) স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী সাত দিনের মধ্যে বিচার কাজ শুরু হবে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা আজকেই পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আছিয়ার মরদেহ দাফনের জন্য মাগুরায় নিয়ে যাওয়া হবে হেলিকপ্টার যোগে। আছিয়ার মরদেহ এবং তার পরিবারের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উপস্থিত থাকবেন, তিনি সেখানে দাফন পর্যন্ত থাকবেন।
এর আগে দুপুর ১টার দিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটি মৃত্যু হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এ ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
আরও জানানো হয়, শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।
এ দিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম মামলাটির তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে মাগুরা পৌর এলাকায় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত বুধবার (৫ মার্চ) দিবাগত রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবার জানায়। বৃহস্পতিবার অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সর্বশেষ রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন ছিল।
শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন—শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীব শেখের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
আমার বার্তা/এমই