ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘আমরা তো আসছি মেহমান হয়ে। এই ঘরে যারা থাকবেন, ঘরের সেই মালিকরা হলেন নির্বাচিত সরকার। আমরা একটা নির্বাচিত সরকারের জন্য গ্রাউন্ড তৈরি করছি। যারা আসবেন তাদের হাতে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবো, বাকি সময়টুকু আমাদের। দেশে এতো বিশাল জঞ্জাল-এতো অনিয়ম, এই অল্প সময়ের মধ্যে তা দূর করা না গেলেও আমরা কাজ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছু দুর্বৃত্ত কিছু কায়েমী স্বার্থবাদী লোক এই সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য দুঃসাহসিক প্রয়াস চালায়। এই সম্প্রীতি যারা বিনষ্ট করতে চায় তাদের প্রতিহত করার জন্য আমরা অত্যন্ত সজাগ আছি। কোনো দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে যদি হানাহানি থাকে তাহলে জাতীয় অগ্রগতি জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হতে বাধ্য। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না হলে সামনে কদম বাড়াতে পারবেন না।’
উপদেষ্টা শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে খুলনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক সমস্যা নিরসনে ওলামা-মাশায়েখদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। আমরা চিন্তাভাবনা করছি ইমাম এবং খতিবদের জন্য একটা বেতন স্কেল ঘোষণা করবো। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করে ওই স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করার চিন্তাভাবনা করছি। সব মসজিদ কমিটি না পারলেও অধিকাংশ মসজিদ পারবে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অতীতে যারা ছিলেন তারা নিয়ম-কানুন আইনের কোনো তোয়াক্কা করেননি। আজেবাজে বই ছেপে গুদাম ভর্তি করেছেন, এগুলো রাখারও জায়গা নেই। সমস্যা হলো আগে যারা ছিলেন তারা অনিয়ম করে গেছেন, এটার বোঝা আমাদের ওপরে এসে পড়ছে। আগের মহাপরিচালক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩০০ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন, কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি, তাদের কারও ইন্টারভিউ হয়নি। আমরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আবার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা ৮০ কোটি টাকা দিয়ে বাইতুল মোকাররমকে দৃষ্টিনন্দন মসজিদে পরিণত করবো।’
উপদেষ্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘এসআইবিএল ব্যাংকের ৬০০ জনকে কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করেছে। তাদের কোনো ইন্টারভিউ হয়নি, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি হয়নি। ব্যক্তি বিশেষ সিভির ওপর স্লিপ দিয়েছে, চাকরি হয়ে গেছে। এখন এসআইবিএল ব্যাংক ৫০ হাজার টাকার চেক দিলেও তা দিতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘মডেল মসজিদ নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে একটা কমিটি গঠন করে দিয়েছি, তারা অনিয়ম তদন্ত করছেন। তদন্ত করে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা পানির জাহাজে হজে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই জাহাজ নেই। টাকা নেই, জাহাজ কীভাবে থাকবে। এই জাহাজ আনতে ১ হাজার কোটি টাকা লাগবে। জাহাজ কোম্পানি বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা প্রপোজাল রেডি আছে, আপনারা এটা রিলিজ করে দিলেই আমরা আনবো। আগামী সোমবার আমার মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকে যাবে। তাদের সঙ্গে আলাপ করে যদি টাকাটা ছাড় করাতে পারি তাহলে এ বছর সমুদ্রপথে জাহাজে হজযাত্রীদের পাঠাতে চেষ্টা করবো। যদি বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাড়া না করে তাহলে একটা পথ দেখিয়ে দিলাম, আগামী বছর যদি কেউ চেষ্টা করে তাদের জন্য পথ খুলে যাবে।’
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মো. তবিবুর রহমান, ধর্ম উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান সিকদার। খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইউসুপ আলীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তৃতা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মুহম্মদ জালাল আহমদ। সভায় ওলামা মাশায়েখসহ তিনশ’ ইমাম অংশগ্রহণ করেন।
আমার বার্তা/এমই