সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ৫৪ বছর পার করছে, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের পরিবেশ রক্ষায় আমরা তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনি। ঢাকায় আগে যেসব খাল ছিল তা আর নেই। ফলে এখন একটু বৃষ্টিতেই জলাদ্ধতা তৈরি হয়। নদী দখল যারা করছে তারা সবাই সরকারের কাঁধে ভর করে এ কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ট্যানারি সরানোর পরও দূষণ কমেনি। বুড়িগঙ্গা অনেক বড় একটি নদী ছিল, যা বর্তমানে সরু খাল হয়ে এসেছে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘প্রস্তাবিত নাগরিক সুপারিশ: নদী সুরক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের গুরুত্ব’ শিরোনামে এক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইউএসএইড এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের (সিপিআই) সহযোগিতায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এ নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত নারী আসন) অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, ইউএসএইড বাংলাদেশের ডিআরজি অফিস ডিরেক্টর অ্যালেনা ট্যানসি, সেন্টার ফর অ্যানভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএসএস) এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান।
তিনি আরও বলেন, নদী দূষণমুক্ত করতে সরকার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাবোই। বর্তমান সরকার নদীগুলো রক্ষায় অঙ্গীকার করেছে তার বাস্তবায়ন হবেই।
অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, আমাদের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে ব্যক্তি জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। সরকার সব জায়গায় কাজ করতে সচেষ্ট রয়েছে। ইলিশ সংরক্ষণসহ পরিবশ সংরক্ষণে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে।
কেটি ক্রোক বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিবশে সমস্যাগুলো এ দেশের নাগরিকদেরই সমাধানের প্রচেষ্টা করতে হবে। তবে আমরা আমাদের জায়গা থেকে ন্যায্য সহযোগিতা সবসময় অব্যাহত রাখবো যাতে করে আপনারা আপনাদের সুন্দর প্রচেষ্টায় আমরা অংশীদার হতে পারি।
মালিক ফিদা এ খান বলেন, আমাদের মেনিফেস্টো যদি দেখি দেখবো যে ১৯৭০ এর মেনিফেস্টোসহ পরবর্তীতে সব মেনিফেস্টোতে পরিবেশ রক্ষার সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখেছি। প্রতিদিন প্রায় ৫৮০০ টন সলিড ওয়েস্ট আমদদের ডাম্পিং করার ক্যাপাসিটি আছে। যে সোর্স থেকে এ দূষণ হচ্ছে সেসব জায়গায় আমাদের নজর দিতে হবে। ইটিপি ও সেন্ট্রাল ইটিপি নির্মাণ করতে হবে।
এসময় উপস্থিত বিভিন্ন পরিবেশকর্মীরা বলেন, গত পঞ্চাশ বছরে আমরা দেখেছি প্রায় ১৫৮টি নদী শুকিয়ে গেছে। ঢাকার চারটি নদীকে ইকোলজিকালি ডেড ঘোষণা করা হয়েছে। এ থেকে আমরা বুঝি যে, অন্যান্য গুরুতর অপরাধের মধ্যে আরেকটি অপরাধ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা। নদী ধ্বংসের কারণে আমাদের জীবন-যাপনের ওপর প্রভাব পড়ছে। যারা নদীকে দূষণ করছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতে, ২০১৯ সালে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষ মরেছে পরিবেশ দূষণ জনিত কারণে। আমাদের দেশের ভূ-প্রকৃতিকে বিবেচনায় নিয়ে বলতে হবে যে, বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করে উন্নয়ন করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে আইনের অভাব নেই কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব নেই।
আমার বার্তা/এমই