দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া সংগঠন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির রদবদল হয়েছে। সাবেক জাতীয় ফারুক আহমেদের স্থলাষিভিক্ত হয়েছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এই দুই ঘটনা ঘটেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনয়ন প্রত্যাহার ও প্রদানের ফলে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান। আজ বিকেলে জাতীয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিসিবি সভাপতি রদবদলের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।
সাবেক জাতীয় অধিনায়ক ফারুক আহমেদকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক মনোনীত করেছিলেন। তার মনোনীত পরিচালককে ৯ মাস পর প্রত্যাহারের কারণ সম্পর্কে বলেন, 'প্রথমত এটা যেভাবে যাচ্ছে, এটা কোনো শাস্তি বা এ রকম কিছু নয়। বিগত ৯ মাসে বিসিবি নতুন নেতৃত্ব আসার পর যে প্রত্যাশা ছিল সেটা হয়নি। প্রথম এই সরকার আসার পর পাকিস্তানে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজি জিতেছিল। তারপর থেকে ক্রমে অবনতি হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা যা করেছি পারফরম্যান্সের বিচারেই।'
এ সময় তিনি বাফুফের প্রশংসা করে বলেন, 'ডেভলপমেন্ট সময় লাগে না বাফুফে ইতোমধ্যে প্রমাণ করতে পেরেছে। ফুটবলকে কেন্দ্র করে নতুন উন্মাদনা আশার সঞ্চার। ক্রিকেটের অবস্থা দিনকে দিন খারাপ করছে।’
ফারুকের মনোনয়ন প্রত্যাহারের পেছনে বিপিএল অব্যবস্থাপনাকে বড় অংশে দায়ী করেছেন উপদেষ্টা, 'বিপিএলে দুর্বার রাজশাহী দলের পেমেন্ট ও টিম হোটেল ইস্যু নিয়ে সরকার পর্যন্ত গড়িয়েছিল। যা অবশ্যই বিব্রতকর। বিপিএল ফাইনালে সরকার প্রধানের উপস্থিত থাকার কথা ছিল কিন্তু আনতে পারিনি এটা অবশ্যই লজ্জাজনক। বিপিএলে অনেকগুলো অনিয়ম ও অবহেল ছিল যেগুলো আপনারাই রিপোর্ট করেছেন। বিপিএল নিয়ে রিপোর্ট করেননি এ রকম কেউ নেই। অনেক কিছুতেই ফারুকের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন। ক্রিকেট একটা টিম, বিসিবিতে টিম হয়নি। বাকি যারা আছেন তারা কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না, ক্রম অবনতির এটাও বড় কারণ। বিসিবির আরজি (পরিচালকদের অনাস্থা) ও বর্তমান পরিস্থিতি, সত্যানুসন্ধান রিপোর্ট সকল কিছুর সম্মিলনেই এই মনোনয়ন প্রতাহার। কোনো দুর্নীতির প্রমাণ নয়, পারফরম্যান্সের কারণেই তাকে সরানো হয়েছে।’
এরপর তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, 'কোনো খেলোয়াড় যদি রেগুলার ব্যর্থ হয় তাহলে কি তাকে নির্বাচকরা দলে রাখবে? এখানে সেটাই হয়েছে। এমনকি আমি যদি পারফর্ম না করতে পারি আমিও পরিবর্তন হতে পারি।’
যে আট জন পরিচালক ফারুক আহমেদের বিপক্ষে অনাস্থা এনেছেন এদের মধ্যে সাত জন নাজমুল হাসান পাপনের সময়েও ছিলেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপদেষ্টার নিজের মনোনীত ব্যক্তির উপর মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন হলে উপদেষ্টা বলেন, 'কে কি বলল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, ফ্যাক্টটা কি। ফ্যাক্ট বিবেচনায় নিয়েছি। প্রশাসনিকভাবে কাজ হয়নি। ঐতিহাসিকভাবে তলানিতে। আমার ফোকাসটা ক্রিকেট কোনো ব্যক্তি নয়। আমিনুল ভাইকে চিনি না, ফারুক ভাইকেও চিনতাম না। আমি দায়িত্ব থাকাবস্থায় ক্রিকেটকে তো ডুবে যেতে দিতে পারি না।'
বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ নিজ থেকে পদত্যাগ করেননি। তিনি পদত্যাগ না করায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছে। এতে ক্রিকেটাঙ্গনে খানিকটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। এ নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'স্পোর্টস সেক্টরের কোনো কিছু গোপন থাকে না আপনাদের কাছে চলেই যায়। উনি নিজে থেকে করতেন তাহলে মনোনয়ন তুলে নিতে হতো না। স্পোর্টসের পরিবেশও এ রকম হতো না। জোরপূর্বক সভাপতি হিসেবে সরানো হয়নি।’
আরেক সাবেক জাতীয় অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নিয়ে বলেন, 'তিনি আইসিসিতে কাজ করতেন। সেখানে যে সম্মানী পেতেন আমরা তা দিতে পারব না আর এখানে তো সিস্টেমও নেই। তাকে প্রস্তাব দেয়ার পর তিনি দেশের জন্য কাজ করতে চেয়েছেন।'
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে। শীর্ষ ফেডারেশনের মধ্যে হকি ফেডারেশনের ফলাফল ব্যর্থতা রয়েছে। ৪৩ বছর পর বাংলাদেশ হকি দল এশিয়া কাপ খেলতে পারছে না। দল নির্বাচন ও পরিকল্পনায় হকি ফেডারেশনের গলদ রয়েছে বলে ধারণা হকিসংশ্লিষ্টদের। ফারুক আহমেদের অপসারণ অন্য ফেডারেশনগুলোর জন্যও বার্তা হিসেবে সেট করেছেন উপদেষ্টা, 'অবশ্যই আমরা সব ফেডারেশনকে নজরদারিতে রাখছি। বিশেষ করে সুস্পষ্টভাবে দুটি রিপোর্ট, প্রগেস ও অডিট। আমরা তাদের প্রোগ্রেস দেখব। কোথায় কোথায় সহযোগিতা করলে সেই খেলা ভালো করতে হবে। শুধুমাত্র খেলোয়াড় পরির্বতন হবে না। অন্যত্রও পরিবর্তন আসবে।'
আমার বার্তা/এমই