ই-পেপার মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে নষ্ট রাজনীতি

শাহীন আলম
২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:২৯

কিশোর গ্যাংয়ে এখন শুধু কিশোররাই নয়, জাড়িয়ে পড়ছে কিশোরীরাও। এ এক ক্ষমতার নেশা, পাড়া-মহল্লায় দাপিয়ে বেড়ানোর নেশা। নষ্ট রাজনীতির কারণে বেড়েই চলেছে এই গ্যাংয়ের আধিপত্য। সরকার প্রধানের কড়া নির্দেশের পরেও এই গ্যাং নির্মূল করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

পুলিশের তথ্য বলছে, বর্তমানে সারাদেশে কিশোর অপরাধীদের প্রায় ১৭৩টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এসব দলে ২ হাজার ২৯ জন কিশোর রয়েছে। কিশোর অপরাধের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৭৮০টি মামলা হয়েছে, এসব মামলায় আসামি ৮৯৬ জন। অপর এক সূত্র বলছে, পুলিশের তালিকার বাইরেও রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা। কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ আর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কঠোর হাতে যথাযথ পদক্ষপে না নিতে পারলে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, কিশোর গ্যাংগুলো গড়ে ওঠে মূলত ওয়ার্ড কাউন্সিলদের (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) প্রত্যক্ষ মদদে। গণমাধ্যমের খবর বলছে, রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে দুই শতাধিক কিশোর গ্যাং দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তত ২১ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাংগুলোকে মদদ দেয়ার অভিযোগ আছে— যারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ডিশ ব্যবসা, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, নির্মাণ কাজে চাঁদাবাজি, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলা, ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রতিটি গ্যাংয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল থাকে— যাদের চলাচল ও কার্যক্রমের মূল বাহন মোটরসাইকেল। এরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়েই চলাফেরা করে।

অভিযোগ আছে, অনেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতারাই কিশোরদের অস্ত্র দেন। কিশোর গ্যাং সদস্যরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজেরাও স্বাধীনভাবে নানাবিধ অপরাধ করে। কোনো একটি অপরাধ করে তার বিনিময়ে টাকা পাওয়ার পাশাপাশি আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়া এবং আইনের আওতায় না আসায় কিশোররা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তারা ধরেই নেয়, রাজনৈতিক বড় ভাইরা তাদেরকে যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রশ্রয় দেবেন। পুলিশ তাদের ধরলেও বড় ভাইরা ছাড়িয়ে আনবেন। এভাবে তাদের মধ্যেও একদিন রাজনৈতিক বড় ভাই হওয়ার স্বপ্ন তৈরি হয়। ফলে তারা সহজে আর এই পথ থেকে বের হতে পারে না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় চলে যায় যে, বাবা-মাও তাদেরকে আর এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন না। অনেক সময় বাবা-মা তাদের আক্রমণেরও শিকার হন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হলেও কিশোর অপরাধীদের গ্যাং কালচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিটি গ্যাংয়ের নেপথ্যেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না তাদের দৌরাত্ম্য। গ্যাংগুলোর এক সদস্যকে আটক করলে দায়িত্ব নিচ্ছে অন্য সদস্যরা। তাদের কারও বয়স ১৮ পেরিয়েছে, কারও বা কম। পাড়া-মহল্লায় তারা চলাফেরা করে দলবেধে। সেসব দলের আবার কিম্ভূতকিমাকার ও ভিন্ন ভিন্ন নামও রয়েছে। বেশ ওদের যেমনই হোক, আচার-আচরণে হিরোইজম ভাব। হরহামেশাই ইভটিজিংয়ের শিকার কিশোরী-তরুণীরা তাদের দেখলেই আঁতকে ওঠে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চুরি, ছিনতাই, লুট, ডাকাতি এমনকি চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে পর্যন্ত পৌঁছে গেছে গ্যাং সদস্যদের দৌড়। সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেমের বিরোধ, জমি দখল, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাঁয়তারা তো রয়েছেই, তারা এখন জড়িয়ে যাচ্ছে মাদককারবারেও। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খুনখারাবি। এই গ্যাং কালচারের সর্বশেষ শিকার হন কিশোর গ্যাং রাব্বি গ্রুপের সদস্য ফয়সাল ওরফে রাসেল।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা অনুযায়ী রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং সরব মিরপুর-পল্লবী এলাকায়। গ্যাং সদস্যদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্থানীয় কাউন্সিলর ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের নামও উঠে এসেছে। কোনো কোনো গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছে বিদেশে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামও। ২০২১ সালে শিশু সন্তানের সামনে শাহিনুদ্দিন নামে এক যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন কিশোর গ্যাং লিডার সুমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা। সুমন জামিনে এসে এখন ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। গত দুই সপ্তাহে তার বাহিনীর হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন ৬ জন। খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে এলাকায় চলছে জমি দখলের মচ্ছব। সন্ত্রাসী সহিদুলের নেতৃত্বে বাউনিয়াধে চলছে আরেকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ। এ ছাড়া ভাই গ্রুপ, অপু গ্রুপ, আব্বাস গ্রুপ, নাডা ইসমাইল, হ্যাপি, বগা হৃদয়, ভাস্কর, রবিন, এল কে ডেভিল বা বয়েজ এল কে তালতলা, পটেটো রুবেল, অতুল গ্রুপ, আশিক গ্রুপ, জল্লা মিলন গ্রুপ, রকি, পিন্টু-কাল্লু গ্রুপ, মুসা হারুন গ্রুপ ওরফে ভাই ভাই গ্রুপ, রোমান্টিক গ্রুপ, সোহেল গ্রুপ, ইসামিন, ইমন ও জুয়েল গ্রুপ, খলিল গ্রুপ, আড্ডু-মিলন ঢালী গ্রুপ, সুজন-রাসেল গ্রুপ, সুমন-বিপ্লব গ্রুপ, সাগর গ্রুপ, জয় গ্রুপ, রবিউল ওরফে সুটার রবু গ্রুপ, মিরাজ ওরফে ভাগিনা মিরাজ গ্রুপও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মিরপুর-পল্লবী এলাকায়।

পল্লবীতে কিশোর গ্যাং ‘ভইরা দে’ গ্রুপের হাল ধরেছে আশিক গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্যরা এতই ভয়ঙ্কর যেÑ তারা তুচ্ছ ঘটনায় যেখানে সেখানে মানুষকে ছুরিকাঘাত করে আহত করছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, জমিদখলে জড়িয়ে পড়ছে তারা। ভইরা দে গ্রুপের নেতা আশিকসহ তার সদস্যদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সময় যত যাচ্ছে, মিরপুর-পল্লবীর কিশোর গ্যাং সদস্যরা ততই বিপদজনক হয়ে উঠছে। এহেন দলগুলোকে আবার ছায়া দিচ্ছে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা, ক্ষেত্রভেদে আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়ারা। উপরন্তু জুটেছে রাজনৈতিক ছত্রছায়াও। আবার অসাধু কিছু পুলিশ সদস্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদও দিচ্ছে এসব গ্যাং সদস্যকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, কিশোর গ্যাং এখন দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় সক্রিয়। শিশুদের লালন-পালন করার ক্ষেত্রে পরিবারগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিষয়ে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে কিশোরদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা তৈরি হচ্ছে। এগুলো প্রশমিত না হওয়ায় তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আমার বার্তাকে বলেন, কিশোর গ্যাং নির্মূলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুলিশ। কোন অবস্থাতে ছাড় দেয়া হবে না। এদের পেছনে যারাই থাকুন না কেন তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। যে কোনো মূল্যে রোধ করা হবে কিশোর গ্যাং। এটা এক ধরনের সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি রোধ করতে তবে শুধু পুলিশ নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনাতাও বাড়াতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আমার বার্তা/জেএইচ

বাতজ্বরের কারণে আপনার হার্টের ভাল্ব নষ্ট হতে পারে

বাতজ্বর এবং হৃদরোগ। আমি মনে করি এই দুইটি রোগ সম্পর্কে আপনাদের অনেকেরই ধারণা থাকতে পারে

ধাত্রী সংকটে বাংলাদেশ

সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও গতকাল রোববার নানা আয়োজনে পালিত হলো আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস ২০২৪। সকালে দিবসটি

প্লাস্টিক দূষণের ফলে মারাত্নকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে

প্লাস্টিক দূষণের ফলে আমাদের বাংলাদেশে দিনে দিনে মারাত্নকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে । বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ

কম্বোডিয়ায় সাইবার দাসত্বের শিকার বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানব পাচারের কথা হরহামেশাই শোনা যায়। এরমধ্যে রয়েছে নারী পাচার। ফুসলিয়ে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জরুরী চিঠি

গজারিয়ায় ১০ ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা

চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই

কালবৈশাখী ঝড়ে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

হজ ভিসায় নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করলো সৌদি আরব

দেশে বিচারাধীন মামলা ৩৭ লাখ ২৯ হাজার: আইনমন্ত্রী

স্ত্রী রাগ করে বাসা থেকে চলে যাওয়ায় স্বামীর আত্মহত্যা

নিজ কক্ষে মিললো আ.লীগ নেতার ঝুলন্ত মরদেহ

যাত্রাবাড়ীর আদিব ফ্যাক্টরিতে সাংবাদিকের উপর হামলা

গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিএনপির আরও তিন নেতাকে বহিষ্কার

লোডশেডিং শূন্যে নেমে এসেছে, দাবি প্রতিমন্ত্রীর

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি হবেই: কাদের

প্রয়োজনের তুলনায় ১ লাখ ৩৩ হাজার টন বেশি মাছ উৎপাদন

ঢাবিতে সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা ৮ মে থেকে

তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৪ জনের

চাঁদপুরে পিকআপ-অটোরিকশা সংঘর্ষে বাবা-ছেলে নিহত

দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার: বিবিএস

ফিলিস্তিনিদের রাফার পূর্বাঞ্চল ছাড়তে বললো ইসরায়েলি বাহিনী

ঢাবি অধ্যাপকের যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে আল্টিমেটাম