ই-পেপার রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কম্বোডিয়ায় সাইবার দাসত্বের শিকার বাংলাদেশিরা

শাহীন আলম, থাইল্যান্ড থেকে ফিরে
০৬ মে ২০২৪, ১১:০১

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানব পাচারের কথা হরহামেশাই শোনা যায়। এরমধ্যে রয়েছে নারী পাচার। ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে হোক আর প্রতারণা করে হোক, বিদেশে নিয়ে নারীদের বিক্রি করা বাংলাদেশের অপরাধ নথিতে নতুন কিছু নয়। তবে পুরুষ বিক্রির অভিযোগ অনেকটা কমই বলা চলে। থাইল্যান্ডের পাশের দেশ কম্বোডিয়াতে বাংলাদেশের পুরুষদেরও বিক্রি করা হয়। নারীদের বিক্রি করে তাদের দিয়ে করানো হয় দেহ ব্যবসা। আর পুরুষদের বিক্রি করে তাদের দিয়ে করানো হয় নানান ধরনের সাইবার অপরাধ। বিক্রি হওয়া পুরুষরা সিন্ডিকেটের হাতে পড়ে অসহায় হয়ে পড়ে। শুরু হয়, এক দুর্বিষহ জীবন। পদে পদে হতে হয় নির্যাতন এবং হয়রানির শিকার। পুলিশের সাহায্য চেয়েও লাভ নেই। এ এক আজব জীবন। বিক্রির পর তাদের হাত থেকে কোনোভাবে জীবন বাঁচিয়ে ফিরে এসেছেন, এরকম কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে থাইল্যান্ডে বসে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এসব বিষয়ে আরও জানা গেছে থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও।

থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল হাই। দীর্ঘদিন ধরে আছেন সেখানে। কাজের সন্ধানে নেমে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট বা চক্রের পাল্লায় পড়ে সহজ সরল আর অভাবী মানুষ আসেন কম্বোডিয়ায়। এখানে আসলেই যে সহজে কাজ মিলবে এমনটি নয়। আর তাই সামান্য অর্থের লোভে আর কাজের বা চাকরির চাহিদায় তারা একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের পাতানো ফাঁদে পা দেয়। আর বিপত্তি ঘটে তখনই। আসলে সচেতন না হলে এই পথে পা ফেলার সম্ভবনা খুব বেশি। আর, সচারচর এমনটাই ঘটছে। নিজের অজান্তেই চাকরি পাওয়ার নামে তারা জড়িয়ে পড়ছে একটি শক্তিশালী সাইবার ক্রাইম চক্রের সাথে।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) তথ্যমতে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ চাকরির সন্ধানে বিভিন্ন দেশে যান। এদের একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্যসহ নানান দেশে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন। বিশেষ করে যারা দেশের বাইরে যাওয়ার আগে তাদের নিয়োগ ও নিয়োগ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য না জেনে শুধুমাত্র দালালের উপর আস্থা এনে বিদেশে যান, তাদের বড় অংশই বিপদে পড়ে। এরা শিকার হন, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক বিয়ে এবং দাসত্বের। কম্বোডিয়াও এরকম একটি দেশ যেখানেও মানুষ এই ধরনের বিপদে পড়ছে। নানান ধরনের লোভে পড়ে আর মোটা অংকের বেতনের আশায় তারা চক্রের পাল্লায় পড়ে নিজেদের একটি শক্তজালে আটকে ফেলছে। চাকরির নামে তারা বিক্রি হচ্ছে সিন্ডিকেটের কাছে। এরপর তারা বাধ্য শ্রমিকের মতো শুধু হুকুম তামিল করে যাচ্ছে। ক্রিতদাসের মতো কাজে লাগিয়ে তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে নানান ধরনের সাইবার ক্রাইম।

এই চক্রের খপ্পর থেকে ফিরে আসা কয়েকজন যুবক আমার বার্তাকে বলেন, কম্বোডিয়ায় অনেকগুলো প্রতারক চক্রের বিশাল সিন্ডিকেট আছে। সম্প্রতি এই সিন্ডিকেটের প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়। দ্বিতীয় প্রধান হলো সরোয়ার। এর পরে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কামাল ওরফে কুত্তা কামাল, রাজু এবং রাসেল। এদের ছাড়াও আরো অনেকে আছে। তারা ভিসা লাগানোর কথা বলে মোট অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছে ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে।

তারা বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে বা আকাশ পথে কম্বোডিয়া প্রবেশের পর তাদের প্রথমে বিভিন্ন শহরে দালালদের ক্যাম্পে রাখা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে দরদাম করে চাইনিজ কোনো অপরাধ সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করা হয়। ওরাই তাদের কঠোর নিরাপত্তায় আটকে রাখে। বেশ কয়েকদিন বাইরে বের হতে দেয় না। পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়া হয় তাদের কাছ থেকে। খাবার অপ্রতুল ও অস্বাস্থ্যকর। বাসস্থানও বসবাস যোগ্য নয়। কিন্তু এসবের প্রতিবাদ করলে বা কাজ চাইলে তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।

এরপর সেই আবাসস্থলেই আটকে রেখে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় সাইবার ক্রাইমের নানান অপরাধমূলক কাজের। এভাবে কয়েকদিন প্রশিক্ষণ দেয়ার পর তাদের দিয়ে করানো হয় নানান ধরনের সাইবার প্রতারণা। বিশেষ করে অনলাইনে বিভিন্ন রকমের প্রতারণা ও হ্যাকিংয়ের কাজ। এসব কাজ কেউ করতে না চাইলে তাকে মারধর করা হয়।

তারা আরও জানান, এভাবে কাজ করতে করতে যারা একটু পারদর্শী হয়ে ওঠেন তাদেরকে সাইবার ক্রাইম বিষয়ে অধিকতর প্রশিক্ষণের জন্য একটি বিদেশি ট্রেনিং সেন্টারে নেয়া হয়। সেখানে বিদেশি প্রশিক্ষকরা তাদের গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করানো শিখায়। এভাবে অরাধ জগতের সাথে চলতে চলতে তারাও বাধ্য হন, সুবোধ বালকের মতো এই চক্রের হুকুম পালন করতে। তারা শিখে ফেলেন, কিভাবে অন্যদের সঙ্গে কম্পিউটারে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতারণা করা যায়, ভুয়া ক্লোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে কিভাবে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ করা যায়, ভুয়া নাম্বার থেকে ফোন কল দিয়ে বা চ্যাটিং করে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার নামে কৌশলে ডিপোজিট হাতিয়ে নেয়া যায়। এরকম আরও নানান কাজে তারা পারদর্শী হয়ে পড়ে এবং সেগুলোই তাদের দিয়ে করানো হয়।

তারা আরও জানান, বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া দুই প্রান্তেই রয়েছে বাংলাদেশি মানবপাচার চক্রের সদস্যরা। বাংলাদেশ থেকে মোটা অংকের বেতনে চাকরির কথা বলে বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়। কাজের কথা বলা হলেও তাদের নেয়া হয় কম্বোডিয়ায় ভ্রমণ ভিসায়। আগেই বলেছি, কম্বোডিয়াতে চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা বাংলাদেশ থেকে আনা ব্যক্তিদের চায়নার ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে দেয়। কখনও কখনও একজনকে কয়েক দফায় একাধিক প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করা হয়। কর্ম দক্ষতার ভিত্তিতে কাউকে কাউকে ৫ হাজার ডলার দামেও বিক্রি করা হয়।

থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল হাই আমার বার্তাকে বলেন, কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের কোনো অ্যাম্বাসি নেই। ফলে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি থেকে কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশিদের এই ধরনের দালালচক্রের হাতে নাজেহাল হওয়ার ঘটনা তিনিও শুনেছেন। আসলে, সাধারণ মানুষ দালালদের খপ্পড়ে পড়ে শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে আর অধিক টাকার লোভে। প্রতারকরা তাদের এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে অনেক ক্ষেত্রে সেখানকার পুলিশেরও কিছুই করার থাকে না।

এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। তবে ঠিক কতজন বাংলাদেশি কম্বোডিয়ায় সাইবার দাসত্বের শিকার হয়েছেন তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।

আমার বার্তা/জেএইচ

পুলিশ-ওয়ার্ড মাস্টারের নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় চাঁদাবাজ চক্র

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারপাশের দেয়াল, ফুটপাত আর রাস্তা ঘিরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ছয় শতাধিক

বদলির দুই মাসেও নতুন কর্মস্থলে যাননি প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বদলি হওয়ার দুই মাসেও নতুন কর্মস্থলে যাননি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরে উপসহকারী প্রকৌশলী

উন্নয়নকাজের খোঁড়াখুঁড়িতে ভোগান্তি নগরবাসীর

রাজধানীর কোথাও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করতে সিটি করপোরেশন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে। কোথাও আবার স্যুয়ারেজ লাইন

স্পেশাল ম্যাংগো ট্রেন চালুর উদ্যোগ

  পঞ্চমবারের মতো এবারও স্পেশাল ম্যাংগো ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। এই ট্রেনটি বিগত বছরে চলেছে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ট্রাম্পের মস্তিষ্ক বিকৃত, গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বাইডেন

রাত ১২টা থেকে নির্বাচনী এলাকায় যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

'অস্বাস্থ্যকর' বাতাস নিয়ে দূষণে দ্বিতীয় ঢাকা

‘বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভোট করার চেষ্টা করছেন মোদি’

পুলিশ-ওয়ার্ড মাস্টারের নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় চাঁদাবাজ চক্র

বদলির দুই মাসেও নতুন কর্মস্থলে যাননি প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান

উন্নয়নকাজের খোঁড়াখুঁড়িতে ভোগান্তি নগরবাসীর

যাত্রাবাড়ীতে হাত-পা বাঁধা অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার

পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করলেন বাবর আলী

সৌদি পৌঁছেছেন ২৮ হাজারের বেশি হজযাত্রী

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৭

১৯ মে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা

৩৩ হাজার দখলদারের হাতে জিম্মি ২ কোটি মানুষের স্বাভাবিক জীবন

ডেঙ্গু নিয়ে তাপসের বক্তব্যকে মনগড়া বললেন সাঈদ খোকন

ছাগল দিয়ে হালচাষ হয় না: জামায়াত নিয়ে ভিন্নমত প্রসঙ্গে কর্নেল অলি

যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত: আইজিপি

স্বর্ণের দাম আরও বাড়লো, ভরি ১১৮৪৬০ টাকা

ডিবি কার্যালয়ে হেফাজত নেতা মামুনুল হক

ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়ে সবশেষ যে তথ্য জানা গেল

৩০ দিনের মধ্যে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ফেরতের দাবি