ঢাকার গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার আবদুর রাজ্জাক বিন সুলায়মান ওরফে রিয়াদ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের আশ্রয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানিয়েছেন জুলকারনাইন সায়ের।
‘কিছু প্রশ্ন’ শিরোনামে জুলকারনাইন সায়ের পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করেন।
১. বিপ্লবের আগে ছাত্রশক্তির ঢাবিতে লোকবল কত ছিল?
২. দেশের অন্য কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কমিটি ছিল?
৩. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের নাহিদ ইসলাম ৫ আগস্টের পূর্বে চিনতো কি না?
৪. কেবল ছাত্রশক্তির বিপ্লব সংগঠিত করার মতো সাংগঠনিক কাঠামো ছিল কি না?
৫. গুটিকয়েক সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী না জানালে সাদিক কায়েমের অবদানের কথা নাহিদ ইসলামরা জাতিকে জানাতেন কি না?
এরপর ‘পুনশ্চ’ লিখে এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের উদ্দেশে জুলকারনাইন সায়ের বলেন, ‘নাহিদ ইসলাম, আপনার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, আমি বৈষম্যবিরোধী চাঁদাবাজ রিয়াদকে কোনো রকমের সার্ভেলেন্সে রাখি নাই। আর সে চাঁদা আনতে গিয়ে যে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেটা লাগানোতেও আমার কোনো ভূমিকা নাই।’
‘রিয়াদ যে আপনার শেল্টারে ছিল সেটা আমি জানতাম। পরে জানতে পারলাম, আপনার ও আপনার বাবার সাথে তার ঘনিষ্ঠতার কথা। আপনি আমার উপর ক্ষেপে গেছেন কারণ আপনাকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে যে রিয়াদকে ধরিয়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নাকি আমার।’
শেষে জুলকারনাইন সায়ের লেখেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই যে, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদকে পাকড়াও করার ঘটনায় আমার কোনো হাত নাই।’
এর আগে বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী জাতীয় সরকার, নতুন সংবিধান ও নানারকম ঢালাও প্রচারণাসহ বিভিন্ন বিষয়ের অবতারণা করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সেখানে তিনি লেখেন, ২ আগস্ট, ২০২৪ রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশ্যে কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেইট করা হয় যাতে সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য ছিল একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। আমাদের ভেতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। ৫ আগস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি।
নাহিদ ইসলাম লেখেন, সায়েরগং ৫ আগস্টের পর বারবার চেষ্টা করেছে আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করাতে। সেক্ষেত্রে সাদিক কায়েমদের ব্যবহার করেছে। এবং তারা ব্যবহৃতও হয়েছে। সায়ের গংদের এ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভাইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা হেন কোনো কাজ নাই হচ্ছে না। বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার হচ্ছে এ দেশের ইতিহাসে এরকম কখনো হইছে কিনা জানা নাই। কিন্তু মিথ্যার উপর দিয়ে বেশিদিন টিকা যায় না। এরাও টিকবে না।
>> রিয়াদের বাড্ডার বাসায় মিললো প্রায় ৩ লাখ টাকা
বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ সংগঠক ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সেলের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের নাখালপাড়ার বাসায় সোমবার (২৮ জুলাই) রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ অভিযানে সোয়া দুই কোটি টাকা মূল্যমানের চারটি চেক ও প্রায় ২০ লাখ টাকার এফডিআরের নথি উদ্ধার করে পুলিশ।
সেই রিয়াদের আরেকটি ভাড়া বাসার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। রাজধানীর বাড্ডায় ওই বাসাটিতে অভিযান চালিয়ে দুই লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে গুলশান থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াদের একাধিক বাসার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বাড্ডার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে নগদ দুই লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলমান রয়েছে।
সোমবার রাতে উদ্ধার করা সোয়া দুই কোটি টাকার চারটি চেক রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। চেকগুলোতে চেক প্রদানকারী ট্রেড জোনের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদের সই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, চেক চারটি জনতা ব্যাংকের। দুটি চেকে এক কোটি করে দুই কোটি, একটি চেকে ১৫ লাখ এবং অন্যটিতে ১০ লাখ টাকার পরিমাণ লেখা আছে। তবে চেকে কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে ট্রেড জোন নামে। ট্রেড জোনের স্বত্বাধিকারীর নাম আবুল কালাম আজাদ।
আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় সংগঠন থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আমার বার্তা/এমই