বাংলাদেশে ৪০টিরও বেশি ভাষার অস্তিত্ব থাকলেও অনেক নৃগোষ্ঠী ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাষা বিলুপ্তি ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকার ভাষা সংরক্ষণে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘বহুভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ শুধু একটি ভাষার আবাসস্থল নয়, বরং এখানে ৩৫টিরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন ভাষা রয়েছে। প্রতিটি ভাষাই জাতির সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে। বহুভাষা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বহুত্ববাদী সমাজের ভিত্তি তৈরি করে। যখন একাধিক ভাষা সহাবস্থান করে, প্রতিটি ভাষা তার সঙ্গে ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্পরচনা, লোককাহিনী বহন করে যা অন্যদের সমৃদ্ধ করে।
তিনি বলেন, তবে বিশ্বায়ন, নগরায়ণ এবং মাতৃভাষায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব বিশ্বব্যাপী অনেক ভাষার পতনের দিকে পরিচালিত করেছে। আমাদের এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে যা বহুভাষা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা করে।
জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাষার স্বীকৃতি এবং সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায় এবং তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন থাকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহুভাষিকতা প্রচার, বিপন্ন ভাষা সংরক্ষণ এবং এমন একটি পরিবেশ তৈরির উপর জোর দিচ্ছে যেখানে ভাষাগত বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বিদ্যমান সব সাংস্কৃতিক পরিচয়কে সম্মান করে এমন ধারণাকে সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের প্রধান সুসান ভাইস। তিনি বলেন, ভাষা সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখার এবং সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃভাষায় পাঠদান করা হলে এটি শেখার ফলাফলকে শক্তিশালী করে। পাশাপাশি বহু ভাষা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া এবং সামাজিক সম্প্রীতির ক্ষেত্রেও সহায়তা করে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে ৫০টিরও বেশি জাতিগত গোষ্ঠী এবং ৪০টিরও বেশি ভাষা রয়েছে। এই দেশের অনেক মানুষ বহুভাষিক। একটি বহুভাষিক সমাজ বা বিশ্বের অন্ধকার দিক হলো এতে একটি ভাষার প্রাধান্য বা আধিপত্য থাকে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং নৃগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষই এই বাস্তবতার মধ্যে বাস করে।
আমার বার্তা/এমই