পড়াশোনার ধরন বদলেছে। এখন আবার পুরনো পদ্ধতিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অনেক বাচ্চাকেই। বাড়িতে পড়ানোর পর সব ঠিকমতো পারলেও কিছুক্ষণ পরেই আর মনে থাকছে না পড়া। লিখতে গেলে বাচ্চা ভুলেও যাচ্ছে সব। অভিভাবকদের অনেকেই এখন এই নিয়ে বেশ চিন্তায়। বিশেষজ্ঞরা বললেন, কোন উপায়ে বাচ্চাকে পড়া মনে রাখাবেন, স্মৃতিও প্রখর হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন দিয়ে পড়াশোনা করার পরেও পড়া মনে রাখতে পারে না বাচ্চা। অনেক সময়েই এর মূলে থাকে পাঠ্য বিষয়ের প্রতি অনীহা। মন থেকে বিষয়টার প্রতি আগ্রহ অনুভব না করার কারণে পড়া কিছুতেই মনে রাখতে পারে না বাচ্চা। তার উপর বকাঝকা করলে বাচ্চা আরও ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। পড়াশোনা থেকে আরও দূরে সরে যাওয়ার মনোভাব তৈরি হয় শিশুর মধ্যে।
উপায় কী?
বুঝে পড়তে হবে
বাচ্চাকে কোনও একটা বিষয়ে পড়ানোর (Teaching) আগে সে বিষয়টা নিয়ে সহজ ধারণা দিন। গল্পের ছলে বলুন বিষয়টা কী। তাহলে সে বিষয়ের উপর আগ্রহ তৈরি হবে। শুরুতেই পাঠ্য বইয়ের পাতা খুলে পড়াতে গেলে বাচ্চা তাতে আগ্রহ নাও পেতে পারে। বিষয়টা সম্পর্কে ধারণা তৈরি হওয়ার পরে সিলেবাসে যা আছে সেটা ধরে পড়ান।
ছবির সাহায্য নিন
ছবি দিয়ে পড়া মনে রাখা সবচেয়ে সহজ। পড়ার বিষয়টি ছবি এঁকে বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিন। ভিস্যুয়াল গেম, রংচঙে প্ল্যাকার্ডের সাহায্যও নিতে পারেন।
একই বিষয় বার বার পড়াবেন না
যে বিষয়টা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে সেটা নিয়েই বসে থাকবেন না। বাচ্চাকে সেই বিষয়টা বুঝিয়ে অন্য সাবজেক্টে চলে যান। একই বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকলে তাতে আগ্রহ তৈরি তো হয়ই না, সেই বিষয়টা আরও কঠিন লাগতে শুরু করে বাচ্চার কাছে। তাই পাশাপাশি হাল্কা সহজ কোনও বিষয় পড়ান। এতে দুটো বিষয়ের তথ্যই আলাদা করে ব্রেনে সঞ্চিত থাকবে বাচ্চার।
প্রয়োজন বিশ্রামের
একটানা বেশিক্ষণ পড়ালে বাচ্চা কিছুই মনে রাখতে পারবে না। পড়ার সময়টা ছোট ছোট ভাগে ভেঙে নিন, অল্প অল্প করে পড়ান। কাজটা সময়সাপেক্ষ, কিন্তু বাচ্চার এতে পড়া বুঝতে ও মনে রাখতে সুবিধে হবে।
প্রতিদিনের রুটিন
যখন খুশি যা খুশি লাগামছাড়া পড়লে কোনও সামঞ্জস্য থাকবে না। তাই রোজের একটা রুটিন বানিয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে কোন দিন কোন বিষয় কতক্ষণ পড়তে হবে তার একটা রুটিন থাকলে সুবিধা হয়। এরপর স্কুল থেকে ফিরে রোজের পড়া ঝালিয়ে নিলেই হবে। তাতে বেশি মনে থাকবে।
রঙের সাহায্য নিন
পড়ার বিষয়গুলোতে নানা রঙের ব্যবহার বাচ্চাকে পড়া মনে রাখতে সাহায্য করে। এক একটা বিষয় এক এক রঙে দাগিয়ে দিন। বাচ্চা ওই রংগুলো দিয়ে পড়া মনে রাখবে।
গল্প বলে পড়ান
গল্পের মাধ্যমে পড়ার বিষয়গুলো বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিন। প্রতিটি পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে যদি একটা করে গল্প যোগ করতে পারেন, তা হলে বাচ্চা গল্পের মাধ্যমেই পড়া মনে রাখবে।
সময় ও পরিবেশ
কোনও বাচ্চার পড়াশোনা ভোরের দিকে ভাল হয়, আবার কেউ রাতে মন দিয়ে পড়তে পারে। আপনার বাচ্চা কোন সময়টাতে বেশি মন দিয়ে পড়ে সেটা খেয়াল রাখুন। পাশের বাড়ির বাচ্চা ভোর বেলা উঠে পড়ে মানেই আপনি আপনার বাচ্চার জন্য তেমন রুটিন বেঁধে দিলেন সেটা ঠিক নয়।
পরিবেশও খুব বড় ফ্যাক্টর। কোনও বাচ্চা হয়ত পড়াশোনার জন্য একদম নিস্তব্ধ পরিবেশ পছন্দ করে, কারও আবার পছন্দ হাল্কা ক্লাসিকাল মিউজিক বা ইনস্ট্রুমেন্টাল। গান শুনলে পড়া ভাল মনে থাকে। বাচ্চা কেমন পরিবেশে পড়তে পছন্দ করে সেটা মা-বাবাকেই বুঝে নিতে হবে।
প্রয়োজন শরীরচর্চা
মন শান্ত রাখা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হল শরীরচর্চা। শুধু পড়াশোনা নয়, বাচ্চাকে সময়মতো খেলাধূলা করাতে হবে। চেষ্টা করবেন বাইরের পরিবেশে প্রকৃতির মাঝে বাচ্চাকে নিয়ে যেতে। সে সুযোগ না থাকলে বাড়িতে নানা রকম মেমরি গেম খেলাতে পারেন। এখন বাচ্চাদের জন্য নানা ধরনের মাইন্ড গেম বেরিয়েছে যা স্মৃতি বাড়াতে সাহায্য করে। বাচ্চাকে পারলে যোগব্যায়াম করান, মেডিটেশনে অভ্যস্ত করান। এতে মনের চঞ্চলতা কাটবে, পড়াশোনাতেও মন বসবে। স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধি আরও প্রখর হবে।
আমার বার্তা/এল/এমই