নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এক বাংলাদেশি পরিবার বিক্ষোভকারীদের হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডুর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ভাঙচুরের সময় এই ঘটনা ঘটে। এসময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত যখন নেপালে অবস্থানরত জাতীয় ফুটবল দলকে সহায়তা দিতে যাচ্ছিলেন, তখন তার গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। বিষয়টি কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
হামলার শিকার পরিবারটিকে পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে আশ্রয় দেওয়া হয়। দূতাবাসের সূত্রে জানা গেছে, চলমান সংকটের মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ৩০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এবং ২০ জনকে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয়। উদ্ধারকৃতদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবারের বিক্ষোভে কাঠমান্ডুর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অগ্নিসংযোগ ও আরেকটি হোটেলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। সেই হোটেলেই অবস্থান করছিল তিন সদস্যের বাংলাদেশি পরিবার। কর্মকর্তারা জানান, বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে এবং জিনিসপত্র লুট করে নেয়। আতঙ্কে তারা প্রথমে পাসপোর্ট লুকানোর চেষ্টা করলেও পরে রুমে ঢুকে বিক্ষোভকারীরা সেগুলোও লুট করে। হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় এবং অন্য একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করলেও পরিবারটি ভয়ে সেখানেও থাকতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে তাদের দূতাবাসে নেওয়া হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে স্থানান্তর করা হয়।
দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তা জানান, নেপালে থাকা জাতীয় ফুটবল দল এবং স্টাডি ট্যুরে থাকা ডিফেন্স কলেজের ৫১ সদস্যের প্রতিনিধি দলকে বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ওই বিমানে ৩৮ জন ফুটবলার, এক ডজনেরও বেশি সাংবাদিকসহ মোট ৫৪ জন যাত্রী থাকবেন। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সি-১৩০ বিশেষ বিমানটি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হবে।
বর্তমানে নেপালে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি পর্যটক অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিওতে কাজ করছেন। বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, আটকে পড়া বাংলাদেশিরা ভারত হয়ে ফিরতে পারছেন না, কারণ তাদের কাছে ভারতীয় ভিসা নেই। তিনি আরও বলেন, 'তাদের প্রতি আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। তাই আমি মনে করি না বড় কোনো জটিলতা হবে। আমাদের দূতাবাস তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে এবং আমরা আশা করছি সবাই নিরাপদে ফিরবেন।'
নেপালে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশি নাগরিককে হোটেল বা নিজ বাসায় নিরাপদে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক নেপাল ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদেরকে চলমান নিরাপত্তাজনিত কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভ্রমণ স্থগিত করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। - সূত্র: ডেইলি স্টার
আমার বার্তা/জেএইচ