রাশিয়ার বিমান ঘাঁটিতে ইউক্রেনের আকস্মিক ড্রোন হামলাকে তাদের দুঃসাহসী ও অসাধারণ কৌশল বলা হচ্ছে। হামলার পরপরই ইউক্রেনের একটি ম্যাগাজিন ‘দ্য বিজনেস’ এক্সে দেওয়া পোস্টে উল্লেখ করে- ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি = ড্রোনের রাজা। এখন যার হাতে কোন তাসের কার্ড নেই?’ পোস্টটির সঙ্গে ছিল জেলেনস্কিকে তাসের রাজা হিসেবে দেখানো একটি কার্টুন, যেখানে তার হাতে তলোয়ার এবং চারপাশে ড্রোন আঁকা ছিল।
বার্তাটি পরিষ্কার ও প্রত্যক্ষ ছিল। এ বছরের মার্চে ওয়াশিংটন ডিসির ওভাল অফিসে নাটকীয় এক মুখোমুখি আলোচনার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছিলেন, ‘তোমার হাতে কোনও তাস নেই। আমাদের সঙ্গে থাকলে তাস থাকবে, না থাকলে কিছুই থাকবে না।’
এর মাত্র দুই মাস পর কিয়েভ একটি ড্রোন হামলা চালিয়ে শক্তিধর রুশ সামরিক ব্যবস্থাকে চমকে দিয়েছে। হামলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এই আক্রমণের সাহসিকতাই এর তাৎপর্য প্রমাণ করে এবং মানসিক যুদ্ধের ময়দানে ইউক্রেনকে এগিয়ে দেয়।
ড্রোন হামলার পরে এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় জেলেনস্কি এই অপারেশনকে ‘একটি চমৎকার সাফল্য’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ইউক্রেন এই অপারেশনের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন স্পাইডার ওয়েব’। তার বলা এর পরের ছয়টি শব্দ ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ: ‘এই সাফল্য শুধু ইউক্রেনের অর্জন।’ এই বার্তাটি মূলত পাঠানো হয়েছিল ওয়াশিংটন ডিসিকে, যেখানে মার্চের বৈঠকে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছিলেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও সুযোগ নেই।
এই ড্রোন হামলার পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত। ড্রোনগুলো রাশিয়ার ভেতরে ১৮ মাস আগে থেকেই চোরাইপথে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেগুলোকে রাশিয়ার বিমানঘাঁটির কাছে দাঁড় করানো ট্রাকের কাঠের কেবিনের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। হামলার সময় ট্রাকের ছাদ দূর থেকে খুলে দেওয়া হয় এবং ড্রোনগুলো লক্ষ্যবস্তুতে উড়ে যায়।
ইউক্রেনের এই ড্রোন হামলার সময়টি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ আজই তুরস্কের ইস্তাম্বুল রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মধ্যে শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে। ড্রোন হামলার এই সময়জ্ঞান ইঙ্গিত দেয় যে ইউক্রেন আলোচনার টেবিলে নিজেদের অবস্থানকে জোরদার করতে চায়, বিশেষ করে তাদের আঘাত হানার ক্ষমতা প্রমাণ করার মাধ্যমে।
সূত্র: এনডিটিভি