দীর্ঘদিন ধরে সংঘাতে জর্জরিত ক্যামেরুন বিশ্বের ‘সবচেয়ে অবহেলিত’ মানবিক সংকটের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি)। মঙ্গলবার (০৩ জুন) প্রকাশিত এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবছর স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই মানবিক সহায়তা সংস্থা বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে অবহেলিত ১০টি সংকটপূর্ণ দেশের তালিকা প্রকাশ করে। এনআরসি এই মূল্যায়নে তিনটি মানদণ্ড—মানবিক সহায়তার তহবিল, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা—বিবেচনায় নেয়।
এনআরসি জানিয়েছে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্যামেরুনে তিনটি পৃথক ও দীর্ঘস্থায়ী সংকট চলছে। এর মধ্যে রয়েছে—লেক চাদ অববাহিকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘাত, উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে সহিংসতা (যেখানে অ্যাংলোফোন সংখ্যালঘুদের বসবাস), এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র থেকে ছড়িয়ে পড়া অস্থিরতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের হিসাবে দেশটিতে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষার প্রয়োজন ছিল। এর মধ্যে ১১ লাখেরও বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এবং আরও প্রায় পাঁচ লাখ শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন।
সংস্থাটি মন্তব্য করেছে, "ক্যামেরুন বিশ্বব্যাপী অবহেলার একটি কেস স্টাডি। তহবিল ঘাটতি, গণমাধ্যমের অমনোযোগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এই সংকট আরও গভীর হচ্ছে। ২০২৫ সালে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।"
এ বছর প্রকাশিত এনআরসির তালিকায় থাকা ১০টি দেশের মধ্যে আটটিই আফ্রিকান। তালিকায় ক্যামেরুন ছাড়াও রয়েছে ইথিওপিয়া, মোজাম্বিক, বুরকিনা ফাসো, মালি, উগান্ডা, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং সোমালিয়া। আফ্রিকার বাইরের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরান ও হন্ডুরাস।
এনআরসি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে জরুরি মানবিক সহায়তার জন্য চাওয়া তহবিলের অর্ধেকেরও কম পাওয়া গেছে। এই ঘাটতি বিশ্বব্যাপী সামরিক খাতে ব্যয়ের মাত্র ১ শতাংশের সমান।
সংস্থাটির মহাসচিব জ্যান এগল্যান্ড বলেন, "পূর্বে যারা উদার দাতা ছিল, তাদের অনেকেই এখন ক্রমবর্ধমানভাবে অন্তর্মুখী এবং জাতীয়তাবাদী নীতির দিকে ঝুঁকছেন, যা আন্তর্জাতিক সংহতির পরিপন্থী।"
তিনি আরও বলেন, "ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যত্র আমরা দেখছি—মানুষ যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের মধ্যে, তখনই দাতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।"
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈদেশিক সাহায্য কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং ইউএসএআইডি (USAID)-এর মতো বড় উন্নয়ন সংস্থা বন্ধ করে দেন। এই সংস্থা বছরে ৪২.৮ বিলিয়ন ডলারের বাজেট পরিচালনা করত এবং বিশ্বব্যাপী মানবিক সাহায্যের ৪২ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করত।
এছাড়া বাজেট ঘাটতি ও রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলার অজুহাতে ইউরোপের একাধিক দেশও তাদের আন্তর্জাতিক সাহায্য কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।
আমার বার্তা/এমই