ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম।
তিনি বলেন, পরিত্যক্ত ভবন বাদ দিয়েও ছাত্রদের থাকার মতো সিট রয়েছে। কিন্তু সিনিয়র শিক্ষার্থীরা এক রুমে সর্বোচ্চ দুই-তিনজনের বেশি থাকতে রাজি নন। অথচ মিলেমিশে থাকতে চাইলে পরিত্যক্ত ভবন এবং গণরুম ছাড়াই সব শিক্ষার্থীরাই সুন্দর করে থাকতে পারেন।
রোববার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অধ্যক্ষের দপ্তরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন।
ঢামেক অধ্যক্ষ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাউকে রাখতে চান না, তবে কিছু শিক্ষার্থীর মনোভাব ও অসহযোগিতাই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, ঢাকা মেডিকেলের পরিত্যক্ত ভবনে কোনো শিক্ষার্থীর থাকার কথা নয়। সেই ভবন গত সাত মাস আগে গণপূর্ত বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে, তারও আগে থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়ে আসছি, যেন তারা ভবনটি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে আসে। বর্তমান প্রশাসন গত প্রায় নয় মাস ধরে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে আনার।
তিনি বলেন, আমরা শুধু একটি নির্দেশনা দিয়ে থেমে থাকিনি। অনেকবার তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। একাধিকবার অভিভাবকসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের বলেছি- ‘বাবা, এই ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, জীবন নিয়ে খেলা কোরো না’। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলেছে- ‘আমরা যদি এই হল ছাড়ি, তবে কোথায় যাব?’
অধ্যক্ষ ডা. কামরুল আলম দাবি করেন, ঢাকা মেডিকেলের আরও কয়েকটি হল আছে, সেগুলো পরিত্যক্ত নয়। সেখানে ছাত্ররা থাকে। কিন্তু সেখানে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, ‘কে কার সঙ্গে রুম শেয়ার করবে’, এগুলো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ চায় এক রুমে দুজন থাকুক, কেউ বলে তিনজন পর্যন্ত ঠিক আছে-এর বেশি নয়।
তিনি বলেন, এভাবে হলে তো সমস্যা হবেই। সবাই যদি একে অন্যকে একটু সহানুভূতির চোখে দেখত, তাহলে কোনো সংকট থাকত না। কারণ, আমরা হিসাব করে দেখেছি, নতুন ব্যাচসহ ছয়টি ব্যাচে আমাদের ছাত্র সংখ্যা ৭৫৫ জন, আর পরিত্যক্ত ভবন ও গণরুম বাদ দিলেও বাংলাদেশি মান অনুযায়ী আমরা ৭৬৬ জনকে সিট দিতে পারি। সুতরাং সিটের ঘাটতি নেই।
তিনি যুক্ত করেন, হ্যাঁ, আমরা এখন বিদেশি স্ট্যান্ডার্ডে যেতে পারব না- যেখানে একজন ছাত্র একটি রুম পায়। বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সেটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিন্তু ন্যূনতম নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতে আমরা আন্তরিক।
‘কলেজ নিজেরাই বন্ধ করে দেয় ছাত্ররা, এটা দুঃখজনক’
অধ্যক্ষ দাবি করেন, ছাত্ররা আমাদের আগে থেকেই কলেজ কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে। ঈদের আগেই তারা নিজেরা কলেজে তালা লাগিয়ে দিয়েছে, ক্লাস বর্জন করেছে। অথচ মেডিকেলের ছাত্ররা সাধারণত ঈদের আগে-পরে নিজেরা দু-একদিন ছুটি নিত, তবুও ক্লাস চলত। কিন্তু এবার তারা পূর্বঘোষণা ছাড়া ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা একসময় নিজেরাও মেডিকেলের ছাত্র ছিলাম। তখন এমনটা করতাম না। আন্দোলন হতে পারে, দাবি তোলা যেতে পারে, কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম একতরফাভাবে বন্ধ করে দেওয়াটা কখনোই সমাধানের পথ নয়।
‘আমরাও চাই ভবনের সংস্কার হোক’
অধ্যক্ষ বলেন, আমরাও চাই ভবনগুলোর উন্নয়ন হোক। এই অবস্থায় কেউ থাকতে পারে না। ঢামেক প্রশাসনের পক্ষে এই ভগ্নদশা মেনে নেওয়া কখনোই কাম্য নয়। তবে সে জন্য ছাত্রদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা অস্বীকার করছি না। কিন্তু দায়িত্বহীনতা, বিশৃঙ্খলা ও অনমনীয় মনোভাব আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। যদি তারা সহযোগিতা করত, তাহলে এতদিনে আমরা একটি কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে পারতাম।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ক্যাম্পাস ও আবাসনের পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। মূল দাবি হচ্ছে- নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণের বাজেট পাস, বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা, নতুন একাডেমিক ভবনের বাজেট এবং প্রতিটি প্রকল্পে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি।
কিন্তু গতকাল (২১ জুন) কলেজ প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। শিক্ষার্থীরা ওই নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দেয়- তারা হল ছাড়বে না এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সরেজমিনে না এলে কঠোর কর্মসূচি নেবে।
আমার বার্তা/এল/এমই