জাহাজের পাশাপাশি কনটেইনার জট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতি আনতে অবশেষে কনটেইনার ধারণ সক্ষমতা বাড়ানোর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রথম পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা কয়েকটি শেডে অন্তত সাড়ে ৫ হাজার কনটেইনার রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৬ হাজার রফতানি কন্টেইনারের জন্য ডেডিকেটেড শেড অপারেশনে যাবে চলতি বছরেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে পুরাতন ইয়ার্ড জেনারেল কার্গো বার্থে কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা ১৯ হাজার ৮০৮ টিইইউএস। আর সবচেয়ে আধুনিক ইয়ার্ড এনসিটির ধারণক্ষমতা ১৩ হাজার ৮৭৬ টিইইউএস। এর বাইরে চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনালে ৮ হাজার ৩৭৬, নিউমুরিং ওভারফ্লো ইয়ার্ডে ৬ হাজার, সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ডে ৩ হাজার এবং নর্থ কনটেইনার ইয়ার্ডে ২ হাজার ৪৫৮ টিইইউএস কনটেইনার রাখা যায়।
এই ৬টি ইয়ার্ডে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা থাকলেও তা বর্তমান সময়ের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে একেবারেই নগণ্য। এমএসসি শিপিং লিমিটেডের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, বন্দরের হ্যান্ডলিং ও স্টোরেজ সক্ষমতা বৃদ্ধির গতি ব্যবসার বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যার কারণে জাহাজের বার্থিংয়ে সংকট দেখা দিচ্ছে।
এ অবস্থায় কনটেইনার জট নিরসনে পরিত্যক্ত শেডগুলোকে ইয়ার্ডে রূপান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রথম পর্যায়ে বন্দরের বাইরে এক্স-ওয়াই শেডে কনটেইনার এনে রাখা হচ্ছে। এছাড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে পুরাতন অকশন শেড, গাড়ি সংরক্ষণ শেড এবং ব্যাগেজ শেড। অন্তত ৬ হাজার বাড়তি কনটেইনার এসব শেডে রাখা সক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, কনটেইনার ধারণ সক্ষমতা বাড়ানো হলে আমদানি ও রফতানিকারকরা আশ্বস্ত হবেন। তাদের কনটেইনার সময়মতো ডেলিভারি পাওয়া নিশ্চিত হবে এবং কোনো ধরনের দেরি বা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে না।
মাত্র ৬টি কনটেইনার ওঠানামার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা এখন ৬০ হাজারের কাছাকাছি। এদিকে বন্দরের অব্যবহৃত জায়গাগুলোতেও কনটেইনার রাখার প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন স্থানে চলছে নতুন ইয়ার্ড নির্মাণের তোড়জোড়। চলতি বছর ৪ হাজার ধারণ ক্ষমতার আরও একটি শেড তৈরি হবে। সেইসঙ্গে তৈরি হবে রফতানিমুখী ৬ হাজার কনটেইনারের আরেকটি নতুন শেড।
তথ্য বলছে, বছরে বন্দরে কনটেইনার ওঠানামা করছে ৩২ লাখের বেশি। তবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পাশাপাশি সুশৃঙ্খল ট্রাফিক সিস্টেম নিশ্চিত করে বন্দরের বাইরের ইয়ার্ডগুলোর কার্যক্রম শুরু করার পরামর্শ বন্দর ব্যবহারকারীদের। রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহেদ আলম বলেন, গেট সিস্টেম আরও সহজ করতে হবে এবং দ্রুত প্রবেশ-বাহিরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
৫৯ হাজার ধারণ ক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে বর্তমানে কনটেইনার রয়েছে ৪৩ হাজার ৪৪৮ টিইইউএস। এর বাইরে কন্টেইনারবাহী ১৩টি জাহাজের অবস্থান রয়েছে বন্দরের প্রধান জেটি ও বহিঃনোঙ্গরে।
আমার বার্তা/এল/এমই