কঠোর মুদ্রানীতি না হলে আবারও বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। এমন শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুদহার বেশি থাকলে যেমন বাড়বে উৎপাদন ব্যয় তেমনি কমবে বিনিয়োগ। যা ভোগাবে সাধারণ মানুষকে।
আগামী বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঘোষণা হতে যাওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতি তাই শিথিল করার পক্ষে তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের আভাস, সংকোচনমুখী পথ থেকে সরে না এলেও এবার কিছুটা ছাড় দিতে চান তারা।
দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবশেষ গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে নীতি সুদহার আরোপ করা হয় ১০ শতাংশে। যা এখনও বহাল আছে। এর প্রভাবে ব্যাংক ঋণের সুদহার উঠে আছে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
গত এক বছরের উদ্যোগে এক শতাংশের ঘরে নেমেছে মূল্যস্ফীতির হার। তবে তা করতে গিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে গেছে ৭ শতাংশের নিচে। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.১ শতাংশ কম। এমন অবস্থায় আগামী বৃহস্পতিবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেখানে বিনিয়োগবান্ধব রূপরেখা চান ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, যেভাবে সুদের হার ১৫ শতাংশে তোলা হয়েছে, তাতে অনেক ব্যবসার পক্ষেই তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আবার একই সঙ্গে আগের নেয়া ঋণগুলোর কিস্তিও ঠিকমতো পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে বাড়ছে কু-ঋণ, যা অর্থনীতির ওপর বড় চাপ তৈরি করতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়াতে না পারলে আবারও লাগামহীন হতে পারে মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে চাইলে ঋণের সুদহার কমানো জরুরি। আর সুদহার কমাতে হলে স্ট্যান্ডার্ড ঋণসুবিধার হার কমাতে হবে। বর্তমানে যা রয়েছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, সেটি নামিয়ে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে আনতে হবে। এতে ধাপে ধাপে ঋণের সুদের হারও কমে আসবে।
ভোক্তা ব্যয়ের চাপ কমতে থাকায় ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে আমদানি কঠোরতা। এ অবস্থায় এবারের কঠোর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি থেকে সরে আসার আভাস বাংলাদেশ ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কিছুটা সংকোচনমুখী নীতি অবলম্বন করতে চাই, যাতে মূল্যস্ফীতিকে আরও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই কঠোর নীতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যই আমাদের। কারণ, বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা এখন প্রধান উদ্দেশ্য।’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা এই কর্মকর্তার। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের সময়ে বেসরকারি খাতে তেমন বিনিয়োগ হচ্ছে না। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। যা দেশের অর্থনীতিকে আরও সচল করবে।
আমার বার্তা/এল/এমই