বড়দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে নিজ পাড়া ছেড়ে অন্য পাড়ায় যাওয়ায় রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে পাহাড়িপল্লির ১৭টি বসতঘর।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে বড়দিন উপলক্ষে গির্জায় প্রার্থনা করতে গেলে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি পূর্ব বেতছড়াপাড়ার ১৭টি কাঁচা বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এদিকে, দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে সহায়সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব পাড়াবাসী। এদিকে ঘটনার পর এক মামলা দায়ের হলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদের ধরতে চলছে অভিযান।
গ্রেপ্তাররা হলেন লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়াপাড়ার বাসিন্দা স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০), মইশৈ ম্যা ত্রিপুরা (৪৮), টংগঝিরি পাড়ায় বাসিন্দা জোয়াতিং ত্রিপুরা (৫২) এবং একই এলাকার বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম (৬৫)।
চন্দ্রমনি ত্রিপুরা, বিদ্যামনি ত্রিপুরাসহ পাড়াবাসীরা বলেন, ‘২৪ ডিসেম্বর রাতে পার্শ্ববর্তী গির্জায় বড়দিন পালন করতে গেলে পুরো পাড়া খালি হয়ে যায়। এ সময় কে বা কারা পুরো পাড়ায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এখন আমরা চরম কষ্টে রাত কাটাচ্ছি। আমাদের খাবার পর্যন্ত নাই। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার দাবি করছি।’
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পর বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকালে গঙ্গাং মনি ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তি লামা থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে রাতেই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ৪ জনকে গ্রেফতার করে লামা থানায় নিয়ে আসে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য বান্দরবান সদর থেকে সড়কপথে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি পূর্ব বেতছড়াপাড়াতে আসেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাউছার।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এই ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কঠোর। এখানে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও ঘটনা দেখতে চাই না। আমরা আজ পরিদর্শন করে দেখতে পেয়েছি ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৭টি ঘর পুড়ে গেছে। আশা করছি, এর মূল কারণ আমরা বের করতে পারবো। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাউছার বলেন, ‘বিষয়টিকে আমরা সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ঘটনাটি ঘটার পর ৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। রাতভর আমরা এখানে অভিযান পরিচালনা করেছি। ৪ জনকে গ্রেফতার করেছি। এ ছাড়া মঙ্গলবার ঘটনার পরপরই লামার ইউএনও ও ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটিকে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।’
উল্লেখ্য, গত তিন মাস আগে লামা উপজেলা ও পাশের আলীকদম উপজেলা থেকে ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়াপাড়ায় বসতি শুরু করে। বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এসব পরিবারের লোকজন পাশের টংগঝিরি পাড়ার গির্জায় প্রার্থনা করতে যায়, এই ফাঁকে দুর্বৃত্তরা পাড়ার কাঁচা ঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়, এতে ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই ঘটনার পর ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আমার বার্তা/এমই