শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দুর্নীতির ও অনিয়মে ভরপুর। পতিত সরকারের দোসররা এখনো আছেন ফুরফুরে মেজাজে। হিসাবরক্ষক এর নেতৃত্বে বিশাল একটি সিন্ডিকেট পতিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। জানা যায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন হিসাবরক্ষক শেখ নাসির উদ্দিন। প্রতারণা, মিথ্যাচার,গুন্ডা বাহিনী লালন করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালকে তার কব্জায় নিয়েছেন। শেখ নাসির উদ্দিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ বছর যাবৎ হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। উক্ত হাসপাতালের সকল ঠিকাদার ও সাপ্লাইয়ার হিসাব রক্ষক নাসির উদ্দীনের হাতে জিম্মি।
অনুসন্ধানে জানা যায় তার এই সকল অবৈধ কাজের সহযোগিতা করে তার শ্যালক শেখ জিয়াউর রহমান। তার আগে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের গোয়েন্দা ইউনিট দুদকের অনুসন্ধান শেষে অনেকের নাম আসতে পারে বলে জানিয়ে ছিলেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত। এর পরেই অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব রক্ষক শেখ নাসির উদ্দিনের নামে সম্পদ বিবরণী দাখিল করার জন্য দুদকের পক্ষ থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে।
তথ্যসূত্রে উঠে আসে, আব্দুস সালাম নামের একজন গত ১২/১০/২০২৩ ইং তারিখ শেখ নাসির উদ্দিনের অবৈধ সম্পদ ও অবৈধ কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে দুদকে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগ দুদক আমলে নিয়েছে বলে জানা যায়। অভিযোগে উঠে আসে, শেখ নাসির উদ্দিন চাকরিতে যোগদানের সময় এত বিত্ত বৈভবের মালিক ছিলেননা। অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন তারা। বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চাকরি করার সুবাদে বানিয়েছে সম্পদের পাহাড়। সর্বসাকুল্যে ৪০,০০০/টাকা বেতনে চাকরি করে কিভাবে এত সম্পদের মালিক হওয়া যায় তা বোধগম্য নয়। নাসির উদ্দিন তার ছেলে মেয়েদেরকে পড়াচ্ছেন ভালো স্কুল এবং কলেজে। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে স্ত্রীর নামে রয়েছে আটতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি।
উক্ত বিষয়ে শেখ নাসির উদ্দিনের কাছে বক্তব্য নিতে গেলে বারবার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরপর তিনদিন দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও অফিসে তার দেখা মিলেনি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সহকর্মীরা জানায়, নাসির সাহেব সারাক্ষণ তদবির নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাকে অফিসের টেবিলে পাবেন না। একাধিকবার তার মুঠো ফোনে ফোন দিয়েও সাড়া মিলে শেখ নাসির উদ্দিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কখন আসেন কখন যান কেউ জানে না। তাকে পরপর এক সপ্তাহে খুঁজে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। এতে প্রমাণিত হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ধার ধারেননা তিনি।
শেখ নাসির উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি খুলনা, বর্তমানে তিনি মিরপুরের ১৭/৩/বি/৩ তৌহিদ টাওয়ার টোলারবাগ স্ত্রীর নামে তিনটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে বসবাস করছেন। তিনটি ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ৫ কোটি টাকা। বিলাসী জীবন পরিচালনার জন্য রয়েছে ঢাকা মেট্রো এঅ-৪২-৬৯৬৪ প্রিমিও ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি। এই গাড়ি করে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করেন, নাসিরুদ্দিনের ব্যবহারের জন্য রয়েছে আলাদা গাড়ি। উক্ত গাড়িটি শেখ নাসির উদ্দিনের শাশুড়ি আফরোজা বেগমের নামে ক্রয় করেন। মিরপুরে জিহা এন্টারপ্রাইজ (১৭/৫ মাজার মার্কেট টোলারবাগ মিরপুর ১) নামে রয়েছে একটি বিশাল জেনারেল স্টোর যা পরিচালনা করেন স্ত্রী এবং আত্মীয়-স্বজন। এছাড়া গ্রামের বাড়ি এবং বিভিন্ন শহরে রয়েছে কোটি কোটি টাকা সম্পদ।
অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে (টিআইএন নম্বর -৭৯৮৪২৫৮৯৮৯৯০) দেখিয়েছেন নিট সম্পদের পরিমাণ ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬২৪ টাকা। ১০ ভরি স্বর্ণ যার মূল্য জানা নাই উল্লেখ করেছেন। ফার্নিচার ও ইলেকট্রিক্যাল দেখিয়েছেন ২ লাখ টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এসে তা দাঁড়ায় ২০লাখ ৪৭ হাজার ৮২৬ টাকা।কিন্তু প্রতারক নাসির তিনটি ফ্ল্যাট এবং গাড়ি তার আয়কর নথিতে উল্লেখ করে নাই।
এ বিষয়ে তার প্রতিষ্ঠিত কোটি টাকার দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করা শ্যালক / সমন্ধির ছেলে মুঠো ফোনে জানায় ঢাকা মেট্রো এঅ-৪২-৬৯৬৪ গাড়িটি শেখ নাসির উদ্দিনের। তিনি তার টাকা দিয়ে দাদির নামে গাড়িটি ক্রয় করে তিনি ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে উনি উক্ত টাকা পরিশোধ করেন। ফ্ল্যাটের ব্যাপারে জানতে চাইলে সে জানায় এখানে তিনি দুটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। উক্ত বিষয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রহরী জানায়, আমার জানামতে উনি দুইটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। গাড়ি ও দোকান শেখ নাসির উদ্দিনের।
আমার বার্তা/এমই