জলবায়ু পরিবর্তনে নানা দূষণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনকে মানব স্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিশেষ করে তাপদাহে বাতাস, মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে। পরিবেশগত এ বিপর্যয়ের কারণে বিশে^ প্রতিবছর প্রায় ১.৩ কোটি মানুষ মারা যাচ্ছে। এছাড়া রাজনৈতিক. সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ু অভিঘাত ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। বিশে^ প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ দূষিত বায়ু গ্রহণ করছে এবং হৃদরোগ, হাঁপানি এবং ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছে। দ্রুতবেগে প্রসারিত হচ্ছে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ।
জানা গেছে, প্লাস্টিক বর্জ্য গভীর সমুদ্র এমনকি সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গেও পাওয়া যাচ্ছে। যা আমাদের খাদ্য চক্রে মিশে নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অস্বাস্থ্যকর খবার ও বিভিন্ন রকম কোমল পানীয় স্থ’লতা, ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলছে। চলতি বছর বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা পরিবেশগত দূষণ এবং এ সংস্লিস্ট রোগবালাই হতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার প্রত্যয়ে বিশ^বাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ এবং কল্যাণকর একটি সমাজ নির্মাণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
গত ২০২০ ও ২০২১ দুই বছর বিশ^বাসী কোভিট-১৯ মোকাবেলা করেছে। কোভিড-১৯ এর কারণে সমাজের দুর্বল ও ঝুঁকি প্রবণ অংশের মানুষ যেভাবে উচ্চহারে সংক্রামিত হয়েছিল তা মূলত: আমাদের বিশ^ সমাজ ব্যবস্থার বৈষম্যকেই তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে বিশে^ অনেক মানুষ আজও দরিদ্র সীমার মধ্যে বসবাস করছে। তাই সকল বৈষম্য দূর করে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ইটভাটা, দীর্ঘমেয়াদি অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম, ময়লা আবর্জনায় আগুন দেয়া, সড়কের ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কলো ধোঁয়া নির্গমন ইত্যাদি। এ ছাড়া নির্বিচারে বন ধ্বংস ও গাছপালা কাটাও পরোক্ষভাবে বায়ুদূষণে ভূমিকা রাখছে। গত ৭ এপ্রিল বিশ^ স্বাস্থ্য দিবস বিষয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা.সামন্ত লাল সেন বলেছেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে। তিনি বলেন, বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো জৈব জ¦ালানীর ব্যবহার। দ্রুতবেগে প্রসারিত হচ্ছে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, চরম বৈরী আবহাওয়া, ভূমিধ্বস ও সূপেয় পানির অভাবে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্লাটিক বর্জ্য গভীর সমুদ্র হতে সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে যা আমাদের খাদ্যচক্রে মিশে নানা রকম ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এছাড়াও প্রক্রিয়াগত ও অস্বাস্থ্য খাবার এবং বিভিন্ন রকম কোমল পানীয় ¯ূ’’লতা, ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের সফলতার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক্স এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ও কর্মচারীদের আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রী। দেশের জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই বিশ^ স্বাস্থ্য দিবসের এবারের আহবান সার্থক হবে বলে ডা. সামন্ত লাল সেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও গত ৭ এপ্রিল বিশ^ ব্যাপী বিশ^ স্বাস্থ্য বিদস পালন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ^ নেতাদের বদ্ধপরিকর হওয়ার দাবি জানান।
এছাড়াও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য নির্মল পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে বায়ুদূষণ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে। বিশেষ করে দেশের শহরগুলো বায়ুদূষণের আধার। নগরগুলোতে বায়ুদূষণের প্রধান কারণ পরিবহন জ্বালানি। এ ছাড়া নগর উন্নয়ন ও এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো উন্নয়ন কার্যক্রমের সময় পরিবর্তন করা, এ ছাড়া বাতাসে কার্বন কমাতে ট্রাফিক জ্যাম দূর করতে হবে। স্বাস্থ্যহানীর ক্ষেত্রে পানি দূষণও আরেকটি বড় কারণ। পানি ফুটাতে প্রচুর জ্বালানি ব্যয় করা হয়, যা বাতাসে কার্বনের মাত্রা বাড়াচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। এ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সর্বস্তরে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) সাহান আরা বানু জানান, বায়ুদূষণ রোধ করার জন্য বেশি করে গাছ লাগানো, জলাধার সংরক্ষণ, ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়া ছাদ বাগান তৈরি, নির্মাণ কাজের সময় মালামাল ঢেকে রাখা জরুরী। এছাড়াও নির্মল বায়ু আইনের বাস্তবায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে বাজেটের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, বায়ুদূষণের মতো শ^াসতন্ত্র এবং হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। গ্লোবাল টোব্যকো সার্ভে-১০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছর তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে তামাক ব্যবহরের হার ৪৮ শতাংশ। আধুনিকতার নামে কম বয়সী ছেলে মেয়েদের মাঝে ই-সিগারেট এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। এটা দূর করার জন্য সাহান আরা বানু সংশ্লিস্টদের প্রতি আহবান জানান।
আমার বার্তা/জেএইচ