ইসালে সওয়াব বা মৃতের আত্মায় সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কোরআন তিলাওয়াত, কালেমার খতম পড়ে বা কোনো জিকির করে কোনো ধরনের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েজ নেই। অর্থের বিনিময়ে ইসালে সওয়াবের জন্য কোরআন তিলাওয়াত করলে মৃতের কোনো সওয়াব হবে না। বরং অর্থের বিনিময়ে কোরআন তিলাওয়াত করা ও করানোর কারণে অর্থদাতা ও গ্রহীতা উভয়ে গুনাহগার হবে।
আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, তোমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি করো না। (মুসনাদে আহমদ: ১৫৫২৯)
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পড়ো এবং বিনিময় আল্লাহ তাআলার কাছে চাও। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে বিনিময় চাইবে। (মুসনাদে আহমাদ: ১৯৯১৭)
তাবেঈ যাযান (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে মানুষের থেকে এর বিনিময় গ্রহণ করে, সে যখন হাশরের মাঠে উঠবে তখন তার চেহারায় কোনো গোশত থাকবে না, শুধু হাড্ডি থাকবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৭৮২৪)
তাই অর্থ বা অন্য যে কোনো কিছুর বিনিময়ে কোরআন তিলাওয়াত করা বা করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। মৃতের জন্য কোরআন তিলাওয়াতের আয়োজন করে শুধু তিলাওয়াতকারীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলে তাও বিনিময় গণ্য হবে এবং তিলাওয়াতকারীদের জন্য ওই খাবার খাওয়া নাজায়েজ হবে।
তবে কোনো বাড়িতে যদি মৃতের সওয়াবের জন্য কোরআন তিলাওয়াত ও ব্যাপক দাওয়াতের আয়োজন করা হয়, তিলাওয়াতকারী ছাড়া অন্যদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়, তাহলে তিলাওয়াতকারীদের জন্য ওই দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা ও খাবার খাওয়া জায়েজ হবে।
ইসালে সওয়াবের জন্য বিনিময় ছাড়া কোরআন পাঠ করার বিধান
মৃতের আত্মায় সওয়াব পৌছানো বা তার উপকারে আসার সুন্নত দুটি পদ্ধতি হলো মৃতের জন্য দোয়া করা এবং সদকা করা। নবীজি (সা.) ও সাহাবিদের থেকে বহু সূত্রে মৃতের জন্য এ দুটি আমলের কথা বর্ণিত রয়েছে।
কোরআনে পূর্ববর্তী মুসলমানদের জন্য পরবর্তী মুসলমানদের ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা তাদের (অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে। তারা বলে, হে আমাদের রব! ক্ষমা করুন আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও যারা আমাদের আগে ইমান এনেছে। (সুরা হাশর: ১০)
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদার (রা.) অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো উপকারে আসবে? নবিজি (সা.) বললেন, হাঁ। সাদ রা. বললেন, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি আমার ‘মিখরাফ’ নামের বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম। (সহিহ বুখারি: ২৭৫৬)
এ ছাড়া নফল নামাজ পড়ে, নফল রোজা রেখে ও কোরআন তিলাওয়াত করেও মৃতের কাছে সওয়াব পৌঁছানোর জন্য দোয়া করা যায়। মৃতের আত্মায় সওয়াব পৌঁছানোর জন্য কোরআন তিলাওয়াত করা নবউদ্ভাবিত পদ্ধতি বা বিদআত নয়।
মা’কিল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ কর। (সুনানে আবু দাউদ: ৩১২১)
শা’বী (রহ.) বলেন, আনসার সাহাবীরা মৃতের কাছে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১০৯৫৩)
সুতরাং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও সদকা করার পাশাপাশি কোরআন তিলাওয়াত করাও জায়েজ এবং এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়।