দুনিয়াতে অনেক বিপদ-আপদ আল্লাহর শাস্তি হিসেবে আসে। বান্দা গুনাহ করতে করতে যখন বেশি বেপরোয়া হয়ে যায়, তখন আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে। মানুষের বিভিন্ন অনিয়ম, নিজের ওপর, প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর জুলুমের অবশ্যম্ভাবি ফল বা শাস্তি হিসেবেও বিভিন্ন বালা মসিবত আসে।
কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, ফলে তাদেরকে কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা রূম: ৪১)
এ ছাড়া মুমিনের জীবনে অনেক বিপদ আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে আসে। মুমিনকে দুনিয়াতে ভয়, ক্ষুধা, জীবন ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করার ঘোষণা দিয়ে কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি (এসবের) কোনকিছুর দ্বারা নিশ্চয়ই পরীক্ষা করব, ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর। (সুরা বাকারা: ১৫৫)
কিছু হাদিস থেকে বোঝা যায় দুনিয়াবি বিপদ আল্লাহর রহমতও হতে পারে। দুনিয়ার বিপদে জর্জরিত হওয়া অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহর নেক বান্দা হওয়ার আলামতও হতে পারে। দুনিয়াবি বিপদে ফেলে আল্লাহ তাআলা তাদের গুনাহ মাফ করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন। (সহিহ বুখারি: ৫৬৪৫)
মুসআব ইবনে সাদ তার বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি মসিবতের সম্মুখীন কারা হয়? তিনি বললেন, নবিগণ, এরপর যারা ভাল মানুষ তারা, এরপর যারা ভাল তারা। একজন মানুষ তার দ্বীনদারির দৃঢ়তা অনুযায়ী পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। যদি তার দ্বীনি প্রতিশ্রুতি মজবুত হয়, তাহলে তার পরীক্ষা কঠিন হয়। আর যদি তার দ্বীনি প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়, তাহলে পরীক্ষা হালকা হয়। এভাবে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে এক পর্যায়ে বান্দা পুরোপুরি পাপমুক্ত হয়ে যায়। (সুনানে তিরমিজি: ২৩৯৮, সুনানে ইবনে মাজা: ৪০২৩)
আবু হোরায়রা (রা.) ও আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, দুনিয়ার বড় ও ছোট সব রকম বিপদ-আপদের বদলে বান্দার গুনাহ মাফ হয়। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মুসলমানের ওপর এমন কোনো বিপদ আসে না, কোনো রোগ, কোনো ভাবনা, কোন চিন্তা, কোন দুঃখ-কষ্ট হয় না, এমনকি তার গায়ে একটি কাঁটাও ফোটে না, যার দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহ মাফ না করেন। (সহিহ বুখারি: ৫৬৪১, সহিহ মুসলিম: ২৫৭২)
আমার বার্তা/এল/এমই