বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই দেশ একটি জনযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন হয়েছে। সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করে এই দেশের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে সঠিক ও যেকোনো কালিমামুক্ত রাখবে, এটি হলো আমাদের শপথ।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ‘পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষক ভারত সরকার ও তাদের গণমাধ্যমের অবিরাম মিথ্যা প্রচারণা এবং ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে’ আয়োজিত আলোচনা সভা ও বিক্ষোভ মিছিলে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। প্রত্যেকটি ইনস্টিটিউশনকে ধ্বংস করে দিয়েছে তিনি। আজকে আবার তার সাবেক আশ্রয়স্থল ভারতে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য, আনস্টেবল করার জন্য। আমি অবাক হয়ে যাই পৃথিবীর বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কীভাবে তাকে আশ্রয় দিলো। তারা কী ৫ আগস্টের লাখ লাখ মানুষের প্রমত্ত ঢেউ দেখেনি? যেটি দেখে শেখ হাসিনা এমনকি ইউনিফর্মধারী বাহিনী পর্যন্ত পালিয়ে গিয়েছিল। এই দৃশ্য দেখার পর কীভাবে তারা (ভারত) কল্পনা করে কীভাবে হিসাব করে দেশ দখল করতে কতদিন লাগবে।
মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সমস্যা হচ্ছে ভারতের মনটা অনেক ক্ষুদ্র। প্রত্যেক প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে তারা (ভারত) ভাবিয়ে তুলেছে। প্রত্যেকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র আজ তাদের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে। কারণ তারা (ভারত) যে দাদাগিরি করে, প্রতিবেশীকে দাবিয়ে রাখতে চায়, এটাতো একবিংশ শতাব্দীর মানুষ গ্রহণ করবে না। বাংলাদেশতো মোটেই না, যারা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে নাই। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া কল্পকাহিনি ছড়িয়ে বেরাচ্ছে যে এখানে (বাংলাদেশে) হিন্দুদের ওপর অন্যায় অবিচার করা হচ্ছে। এই ধরনের কল্পকাহিনি ছড়িয়ে তারা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় যে বাংলাদেশের মানুষ একপেশে, বাংলাদেশে কারও জীবন নিরাপদ নয়। আমরা সম্পূর্ণ এই মিথ্যাচারের নিন্দা জানাচ্ছি।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, যুদ্ধ যদি তারা (ভারত) শুরু করে তাহলে এই যুদ্ধ তাদের দেশে গিয়েই শেষ হবে। আমরা প্রত্যেকটি বাংলাদেশি নাগরিককে সামরিক ট্রেনিং দিয়ে প্রস্তুত করব যুদ্ধের জন্য। প্রত্যেকটি ছাত্র যেন রাইফেল চালাতে জানে। সামান্য ফিল্ড ক্রাফট মিলিটারি ট্রেনিং আমরা তাদের দেবো। যাতে করে কেউ যেন আমাদের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাতে না পারে। আমরা যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছি; চিরকাল জয়ী হবে বাংলাদেশ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, আমাদের জাতির বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাতে গেলে বারবার তাদের চিন্তা করতে হবে। যত বড় শক্তিই হোক— আরে ভারত তো কিছুই না, এর থেকে বড় শক্তিও যদি আসে তাহলেও বাংলাদেশকে পদানত করতে পারবে না। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ফলে নতুন এক বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, নতুন এক বাংলাদেশ আমরা সৃষ্টি করবো। যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না, যেখানে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে কেউ কোনো কটাক্ষ করতে পারবে না। কোনো ভারতীয় দালাল বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। এখন আর কথা বলার সময় নাই, এখন অ্যাকশনে যাওয়ার সময়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হয়েছে। যেমন ৫ আগস্টের পরে অনেক জাতীয়তাবাদী সৈনিক তৈরি হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ৭১ সালে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ না করেও রাজাকারদের সঙ্গে ছবি তোলে পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লিখিয়েছে। এই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্ম বা পরবর্তী প্রজন্ম জানবে কিনা, আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় (ভারত) আমাদের বন্ধু ছিল। কিন্তু এরা যে কখন বন্ধু, কখন শত্রু এটা বুঝতে হলে আমাদের আরও কয়েকশ বছর বাঁচতে হবে। তারা এখন শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। যাদের দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল হয়— তারা (ভারত) শুধু তাদেরই আশ্রয় দেয়। ভারত শেখ হাসিনার চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখে, এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক হবে না।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ। সমাবেশ শেষে তারা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন।
আমার বার্তা/এমই