ই-পেপার বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

মা: ভালোবাসার নিরবধি প্রতিমা

বিল্লাল বিন কাশেম
১১ মে ২০২৫, ১১:৫৭

মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার। আবার এসেছে বিশ্ব মা দিবস—একটি দিন যা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে চিরন্তন ভালোবাসার আলোড়ন। মা—একটি শব্দ, এক অক্ষর, অথচ এর ওজন পাহাড়সম। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিবসের আয়োজন হয় অনেক দেশে, অনেক রকমে। কিন্তু আমার কাছে ২০২৫ সালের মা দিবস এক গভীর শূন্যতার প্রতিচ্ছবি হয়ে এসেছে—কারণ আমার মা, মিসেস গুলশান আরা বেগম (লিলি), আর আমাদের মাঝে নেই।

২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর, মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর অবর্তমানে বুঝতে শিখেছি, সংসারের ছায়াগুলো আসলে তাঁর চারপাশেই ছিল। আমরা পাঁচ ভাইবোন—সব আবেগ, অনুভব আর জীবনের টানাপোড়েনের সঙ্গে মা ছিলেন অলিখিত সঙ্গী। মা ছিলেন না শুধু আমাদের অভিভাবক, তিনি ছিলেন জীবনের প্রেরণা, রক্ষাকবচ। আজ বুঝি, মা হারানো মানেই আত্মার একটি অংশ হারিয়ে ফেলা।

এই বছরের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে আমার পাঁচটি গ্রন্থ—প্রথমবার, মায়ের অনুপস্থিতিতে। মা সব সময় আমার লেখা পড়তেন, কখনো হাসতেন, কখনো চোখের জল ফেলতেন। তাঁর সেই হাসিমাখা মুখ আর স্নেহময় দৃষ্টিকে আজ শুধুই স্মৃতির ফ্রেমে খুঁজে ফিরি।

আমার ছোট ভাই ইলিয়াস এখনো মায়ের রুমে ঢুকে একাকী নামাজ পড়ে, মোনাজাত করে। সে যেন মায়ের উপস্থিতিকে অনুভব করতে চায়, প্রতিদিনের অলিখিত আলাপে। মানুষের দৃষ্টিতে হয়তো এসব আচরণ অদ্ভুত, কিন্তু একটুও নয়—এ হচ্ছে ভালোবাসার সবচেয়ে নিখাদ রূপ।

মা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন—ডায়াবেটিস, কিডনির জটিলতা—তবুও ছিলেন লড়াকু, বাঁচার আগ্রহে পরিপূর্ণ। তাঁর শেষ সময়েও আমি পাশে থেকেছি, কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল থাকায় সেবা করার মতো সক্ষমতা ছিল না। এই ব্যর্থতা এখনো তাড়া করে ফেরে। প্রতিটি ভোরে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে সেই অপূর্ণতার যন্ত্রণা সঙ্গী হয়।

কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। চলতে হয় স্মৃতির ভরসায়, চোখের কোণে মায়ের চেহারা এঁকে।

‘মা’—একটি শব্দ নয়, এটি একটি অনুভব। এটি শাশ্বত, চিরন্তন। কাজী নজরুল ইসলাম যেমন বলেছিলেন, "হেরিলে মায়ের মুখ, দূরে যায় সব দুখ"—ঠিক তেমনই, মায়ের কোলে মাথা রাখলে জীবনের সব ক্লান্তি বিলীন হয়ে যায়।

একজন মা শুধু সন্তান জন্ম দেন না—তিনি জন্ম দেন একটি সত্তার, একটি মানসিকতার, একটি ভবিষ্যতের। তাঁর ভালোবাসা, শ্রম, আত্মত্যাগ—সব মিলিয়ে মা হয়ে ওঠেন জীবনের ভিত্তি।

বিশ্ব মা দিবসের তাৎপর্য এখানেই যে, আমরা এই একটি দিনে হলেও মায়ের অবদান গভীরভাবে স্মরণ করি। তবে সত্যিকার শ্রদ্ধা তখনই হয়, যখন প্রতিটি দিনকে মা দিবসে পরিণত করা যায়।

আমার মা হয়তো একাডেমিকভাবে শিক্ষিত ছিলেন না, কিন্তু জীবনের পাঠে ছিলেন প্রজ্ঞার এক অনন্য প্রতীক। তাঁর হাতে গড়া জীবন ছিল আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সংসার নিয়ে ভাবতেন না খুব বেশি। মা-ই একাই সংসার টেনেছেন, আমাদের বড় করেছেন।

একবার বইয়ের জন্য কান্না করছিলাম। মা তাঁর শাড়ি বন্ধক রেখে আমাকে বই কিনে দিয়েছিলেন। এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পৃথিবীতে আর কোথায় মেলে?

মাকড়সার কথা মনে পড়ে—যে নিজের শরীর বিলিয়ে দেয় সন্তানদের খাবার হিসেবে। কিন্তু মানবমা তো আরও বড় বিস্ময়! তাঁদের আত্মত্যাগ, তাঁদের নিঃশর্ত ভালোবাসা—এসবই আমাদের জীবনের মূলভিত্তি।

মা কেবল সন্তানকে লালন করেন না, গড়েন একটি জাতিকে। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব।”

আমার মাও আমাদের জীবনের নির্মাতা। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হলাম, মা-ই বলেছিলেন—“তুই পারবি, আমি জানি।” সেই বিশ্বাসই একদিন সত্য হলো। আজও জীবনের কঠিন মুহূর্তে মায়ের সেই আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠ আমার হৃদয়ে বাজে—“ভয় পাস না, সামনে যা।”

আজ মাকে হারানোর পর প্রথম মা দিবসে দাঁড়িয়ে আমি তাঁর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও চিরন্তন কৃতজ্ঞতা। তাঁর ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও সাহচর্যের ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না।

আমি জানি, পৃথিবীর প্রতিটি মা-ই তাঁর সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন। আমাদের দায়িত্ব, আমরা যেন তাঁদের জীবিত অবস্থায় সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিই—ভালোবাসা দিয়ে, সেবা দিয়ে, শ্রদ্ধা দিয়ে।

মায়ের ছায়ায় বেঁচে থাকা যায়, মায়ের অনুপস্থিতিতে জেগে ওঠে ভেতরের খাঁজ। তাই আমরা যেন কখনোই মাকে ‘বলার আগেই হারিয়ে না ফেলি’। তাঁর সঙ্গে কথা বলুন, তাঁর পাশে থাকুন, কারণ মা আছেন বলেই জীবন এতটা মধুর।

এই লেখার শেষটুকু আমি উৎসর্গ করতে চাই প্রতিটি মায়ের প্রতি:

“তুমি মা, এই নামেই হৃদয় হয়ে ওঠে জ্যোতির্ময়,

তোমার ছায়াতলে বাঁচে মানুষ, জগত পায় হৃদয়ের আবয়।”

বিশ্ব মা দিবসে—সব মায়েদের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।

লেখক: কবি, গল্পকার ও কলামিস্ট

আমার বার্তা/জেএইচ

জুড়ীর সাহিত্য সাংবাদিকতা : প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞান যুগ

পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আাসা জুড়ী নদীকে কেন্দ্র করে জুড়ী জনপদ গঠিত হয়েছে।

রোহিঙ্গা-রাখাইন সহবস্থান নিশ্চিতে আরাকান আর্মিকে উদ্যোগী হতে হবে

বর্তমানে বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের আধিপত্য সুদৃঢ় করতে আরাকান

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ বায়ুদূষণ

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ, শব্দ দূষণ ও নদী দুষণ ।বায়ু দুষণের-জন্য আমাদের-রাজধানী

শিক্ষক নিয়োগে বৈধতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আমরা অপরাধী?

যখন একজন শিক্ষক জাল সনদধারী হয়েও আদালতের আশ্রয় নেন, তখন তাঁকে বাঁচাতে নড়েচড়ে বসে কিছু
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালে ৩৮ জনের ছানি অপারেশন

দুই বড় বিষয়ে ঐকমত্যে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ

হিজরি সালের প্রথম মাস মহররমের ফজিলত ও আমল

ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রে বহিষ্কার ৭৩ জন, অনুপস্থিত প্রায় ১৯ হাজার

তারেক রহমানের চাচাতো ভাই সেজে প্রতারণা, হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা

টাঙ্গাইলের স্কুলশিক্ষিকা লাকী আখতার আত্মহত্যার সুইসাইড নোট প্রকাশ

বরিশালে সাবেক মেয়রসহ ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুদক

লোকবল নেবে এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড

মুরাদনগরে মা ও ছেলে-মেয়েকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশি রাখালকে গুলি করে হত্যা করলো বিএসএফ

ডেঙ্গুজ্বরে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৮ জন

লাইভস্ট্রিমিং নীতিতে বড় বদল আনলো ইউটিউব

নারী ফুটবল বিশ্বকাপে খেলতে বাংলাদেশের সামনে যে সমীকরণ

ব্যাটিংয়ে দুর্দশা নিয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

গজারিয়ায় নদীতীরে বালু উত্তোলনে জনতার ধাওয়া

আরএফএল গ্রুপে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

অপহরণের পর প্রযোজকে হত্যার হুমকি নিরাপত্তা চেয়ে সুবর্ণা হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারি পর্যায়ে: উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং সভা