ই-পেপার মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

মাদকাসক্তির ভয়াবহ চক্র : ধ্বংসের মুখে যুবসমাজ

সাদিয়া সুলতানা রিমি:
১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৫১

আজকের বিশ্বে যুবসমাজ একসময় জীবনের আশার প্রতীক হলেও, মাদকাসক্তির প্রভাবে তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে এক গাঢ় অন্ধকার জাগ্রত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই খবরদারির মাধ্যমে জানা যাচ্ছে কিভাবে নানা কারণে যুব সমাজ মাদকাসক্তির শিকার হয়ে উঠছে ও তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। সামাজিক চাপ, পারিবারিক দুর্বলতা, শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, এবং ভুল দৃষ্টান্ত—এ সকল কারণ একত্রে মাদকাসক্তির বীজ বপন করছে।

মাদকাসক্তি বলতে সেই অবস্থা বুঝায়, যেখানে কোন ব্যক্তি পুনরায় ও প্রায়ই মাদক দ্রব্য গ্রহণ করে, যার ফলে তার শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। মাদকাসক্তি শুধুমাত্র শরীরের উপর প্রভাব ফেলে না বরং ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ ও সামাজিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।যুবসমাজ হল সেই জনগোষ্ঠী, যারা জীবনের নিরবিচ্ছিন্ন সম্ভাবনা ও উদ্দীপনায় ভরা হলেও, তাদের মধ্যে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বর্তমান জীবনের প্রগতিশীলতা ও আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মানসিক চাপ, একাকিত্ব ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার আগুনে ভরপুর তাদের মাঝে মাদকাসক্তি এক আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে রূপ নিতে শুরু করে।

বর্তমান সমাজে যেভাবে উচ্চ প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা যুবসমাজকে অনবরত চাপে রাখে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি সামাজিক মাধ্যম থেকেও সৃষ্ট অনিয়মিত আদর্শ ও প্রতিযোগিতার মাঝে অনেকেই হতাশার মুখে পড়ে যায়। এই হতাশা ও মানসিক কষ্টের সমাধান খুঁজতে যখন কেউ ভুল পথে চলে, তখন মাদক একটি সহজ ও চটজলদি পথ হিসেবে সামনে আসে। মাদক দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে তারা নিজেদের সাময়িকভাবে রিলিফ ও আনন্দের অভিজ্ঞতা লাভ করে, যা তাদেরকে হীনমূল্য বোঝাতে শুরু করে।

পরিবার হলো সবার প্রথম শিক্ষা ও সামাজিকতা গঠনের কেন্দ্রবিন্দু। তবে আধুনিক জীবনযাত্রায় পরিবারগুলোর মধ্যে উন্নত সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। পারিবারিক অবহেলা, অভিবাবকের অনুপস্থিতি, কিংবা অন্য কোন কারণে সন্তানের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ না দেওয়া, এসবই মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। পরিবারের সঠিক নির্দেশনা ও সমর্থনের অভাবে, যুবসমাজ ভুল পথে যায় ও মাদককে একটি সুরক্ষাকারী সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে।

আর্থিক চাপ, পড়াশোনা, কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ যুবসমাজের মানসিকতায় অগভীর চিহ্ন ফেলে। যখন কেউ নিয়মিত মানসিক চাপের মুখোমুখি হয়, তখন তার মধ্যে আত্মসমালোচনার অনুভূতি ও হতাশা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এসব মানসিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে মাদক দ্রব্য তাদের কাছে একধরনের প্রলোভন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। শারীরিক ও মানসিক আরাম খুঁজতে তারা প্রায়শই মাদক সেবনের দিকে ঝুঁকে যায়, যা তাদের জীবনে আরো বেশি সমস্যা তৈরি করে।

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক মাধ্যম ও ইন্টারনেট যুবসমাজের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যদিও এই প্ল্যাটফর্মগুলো শিক্ষার সহায়ক হলেও, একই সঙ্গে এগুলো ভুল তথ্য, অবাঞ্ছিত বার্তা ও মাদকাসক্তির জন্য প্রলোভন সৃষ্টি করে। নানা রকম ভিডিও, গল্প ও ছবির মাধ্যমে মাদকাসক্তির ‘স্টাইল’ ও ‘গ্ল্যামার’ তুলে ধরা হয়, যা অনেক তরুণকেই আকৃষ্ট করে। সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে প্রচারিত ভুল ধারণা ও উদ্দীপিত মানসিকতা মাদকাসক্তির প্রবণতাকে আরো গভীর করে তোলে।

মাদকাসক্তির ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে মাদক সেবনের ফলে হৃদরোগ, লিভারের রোগ ও নানান ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের টক্সিন সিস্টেমে জমা হওয়া ও বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় যুবসমাজে শারীরিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়। একসময় স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন না নেওয়ার ফলে ভবিষ্যতে গুরুতর অসুখ হতে পারে।

মাদকাসক্তির অন্যতম ভয়াবহ প্রভাব হলো মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন। মাদক গ্রহণের ফলে ব্যক্তির আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা থেকে বিচ্যুত হয়ে, তারা অবাস্তব আকাঙ্ক্ষা ও ধ্রুবক মানসিক চাপের শিকার হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে অবসাদ, নিদ্রাহীনতা, আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও উদ্বেগের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের সামাজিক ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি সময়ের সাথে সাথে অবচেতন মনেও বিরূপ প্রভাব ফেলে, যার ফলে ক্রমশ ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের ফাটল দেখা দেয়।

মাদকাসক্তির ফলে যুবসমাজের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও অপরাধমূলক পরিবেশে প্রবেশের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় তারা নিজস্ব জীবনের পাশাপাশি পুরো সমাজের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে। অনেক সময় মাদক সেবনের প্রভাবে ব্যক্তির মধ্যে সহিংস আচরণ দেখা দেয়, যা পরিবেশ ও আশেপাশের মানুষের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

যৌবনে মাদকাসক্তির ছোঁয়া পড়লে, পুরো সমাজের সুনাম ও উন্নতির দিকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যখন একজন তরুণ মাদক আসক্ত হয়ে যায়, তখন তার পরিবার, সমাজ এবং এমনকি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি হয়। সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে, পারস্পরিক সহমর্মিতা কমে যায় ও অপরাধের হার বাড়ে। এর ফলে সমাজে বিরূপ মানসিকতা ও অবনতি দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে বৃহৎ সামাজিক সমস্যায় রূপান্তরিত হতে পারে।

মাদকাসক্তির ফলে যুবসমাজের উৎপাদনশীলতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। চাকরির হার কমে যায়, কর্মক্ষমতার ক্ষতি হয় ও কর্মশক্তি হিসেবে যুব সমাজের অবদান কমে যায়। কাজের মান ও দক্ষতার হ্রাসের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। বহুমাত্রিক প্রভাব ফেললেও, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের শিল্প ও বাণিজ্য খণ্ডেও এর বিরূপ প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সরকারের উচিত মাদক সেবন ও সরবরাহ রোধে কঠোর আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা। মাদক পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান থাকলে, অপরাধীদের প্রতি প্রবল উদ্দীপনা কমে যায়। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে যে, কঠোর আইন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মাদক সেবনের হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হলে সমাজের সকল অংশীদারের সহযোগিতা ও সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে।

পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো যুবসমাজের প্রথম শিক্ষার ক্ষেত্র। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচিত সন্তানকে মাদকাসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব ও তার বিরূপ ফলাফল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত সচেতনতা সভা, সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তির প্রভাব সম্পর্কে জাগরूक করা দরকার। অভিভাবকরা সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও আলোচনা করে তাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারেন। এছাড়াও, শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরা যথাযথ পরামর্শ ও সমর্থন প্রদান করলে যুবসমাজ ভুল পথে না গিয়ে সঠিক পথে চলতে উৎসাহিত হয়।

সমাজে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে স্থানীয় এনজিও, জনস্বাস্থ্য সংস্থা, এবং যুব সংগঠনগুলো মিলে বিভিন্ন সচেতনতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা উচিত। মাদকাসক্তির ক্ষেত্রে সংগঠিত প্রচারের মাধ্যমেই সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে যুবসমাজকে মাদক আসক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো, শারীরিক ও মানসিক প্রভাব, এবং ভবিষ্যতে তা কীভাবে তাদের জীবনে ক্ষতি করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করে তাদেরকে সচেতন করা যেতে পারে। বিশেষ করে, বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, নাটক, নাট্যশালা ও মিডিয়া প্রচারণার মাধ্যমে মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে বার্তা প্রদান করা যেতে পারে।

মাদকাসক্তির ফলে যুবসমাজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব ফেলে। তাই মানসিক চাপ, অবসাদ, নিদ্রাহীনতা ও অন্যান্য মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষভাবে, কাউন্সেলিং সেন্টার, মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে যথাযথ চিকিৎসা ও সমর্থন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এগুলো যুবসমাজকে প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যতে মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদেরকে শক্তিশালী করবে।

মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সচেতনতা ও প্রাথমিক শিক্ষা অপরিহার্য। শিক্ষাবিদ, মনোসামাজিক কর্মী ও অভিজ্ঞ পরামর্শদাতারা যুবসমাজের মধ্যে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পৌঁছে দিতে পারেন, যাতে তারা মাদকাসক্তির প্রলোভন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, স্কুল ও কলেজে বিশেষ কর্মশালা, সেমিনার এবং ইন্টারেক্টিভ সেশন আয়োজন করা যেতে পারে। এতে করে তরুণরা সচেতনতা অর্জনের পাশাপাশি, মানসিক চাপের মোকাবেলা এবং সঠিক জীবন মূল্যবোধ গঠন করতে শিখবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে কার্যকরী পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু দেশে কমিউনিটি বেইজড পুনর্বাসন কেন্দ্র, যেখানে মাদকাসক্ত তরুণদের জন্য সম্পূর্ণ পুনর্গঠনমূলক, গাইডলাইন ভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। এই ধরনের সেন্টারগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসা প্রদানই করে না, বরং তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং সামাজিক পুনঃস্থাপনের জন্য সহায়তা প্রদান করে।

বাংলাদেশের কিছু শহরে স্থানীয় এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে মহৎ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অনেক জায়গায় যুবসমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ছোট ছোট কর্মশালা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্যাম্প আয়োজন করা হয়। এধরনের উদ্যোগ কেবল তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে না, বরং তাদেরকে সমাজের সাথে পুনরায় যুক্ত হতে সহায়তা করে। এই ধরনের বাস্তব উদ্যোগগুলো দীর্ঘমেয়াদে মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সমাজকে জিতিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে সঠিক তথ্য ও শিক্ষার প্রসার আরও সহজ হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম, মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। বিশেষ করে, যুবসমাজ তাঁদের দিনক্রিয়া ও বিনোদনের জন্য বেশিরভাগ সময় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেই কাটায়। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে সঠিক তথ্য ও আদর্শ উপস্থাপন করলে, তারা মাদকাসক্তির প্রলোভন থেকে সহজেই দূরে থাকতে শিখতে পারে। এছাড়াও, অনলাইন কাউন্সেলিং, হেল্পলাইন ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যাগুলির সমাধান করা সম্ভব।

মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আনতে সরকারকে একটি সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের উচিত কঠোর আইন প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রিত ও মনিটরিং ব্যবস্থা তৈরি করা যাতে মাদক সরবরাহের উৎস ও চেন কেটে দেয়া যায়। এছাড়াও, যুবকদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও পুনর্বাসন কর্মসূচির ব্যবস্থা গ্রহণ করে তারা যেন সুস্থ ও সচেতন সমাজের অংশ হতে পারে তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূলবোধের পুনর্গঠন অপরিহার্য। যুবসমাজকে সঠিক নৈতিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে, সমাজের মূল্যবোধ ও আদর্শের দিকে আকৃষ্ট করা প্রয়োজন। যেখানে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম, সেখানে শিক্ষার্থীদের মাঝে সঠিক ও নৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয় নেতা-জনের উদ্যোগে এই উদ্দেশ্যে সচেতনতা কর্মসূচি আয়োজন করা যেতে পারে।

মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ একক প্রতিরোধ কার্যক্রম নয়। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের কেস স্টাডি থেকে শিক্ষা নিয়ে, দেশীয় পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে যে ধারাবাহিকতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নিজস্ব পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করলে, দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন সম্ভব হবে।

বর্তমান সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো যুবসমাজ। তাদের মাদকাসক্তির প্রভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে যাওয়া শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবন নয়, সমগ্র সমাজের ভবিষ্যতকেও বিপদের মধ্যে ফেলতে পারে। তাই, ব্যক্তিগত সচেতনতা, পারিবারিক সহানুভূতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারের নীতি নির্ধারণ পর্যন্ত, প্রতিটি স্তরে এবং প্রতিটি ব্যক্তিকে একত্রে কাজ করতে হবে।

একটি সুস্থ ও সচেতন সমাজ গড়ে তোলার জন্য আমাদের নিজেকে প্রাথমিকভাবে পরিবর্তন করতে হবে। যতক্ষণ না আমরা মাদকাসক্তির প্রকৃত কারণগুলো চিহ্নিত করে সঠিক সমাধান খুঁজে বের করবো, ততক্ষণই এই ভয়াবহ সমস্যা আমাদের ধ্বংসের মুখে এগিয়ে আসবে। তরুণমনের অদম্য শক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে তাদেরকে একটি ভালো ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে, সমাজের সকল অংশীদারকে—পারিবারিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কর্মী, সামাজিক সংগঠন ও সরকারকে—একসাথে কাজ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বর্তমান বিশ্বে যেখানে প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনের শীর্ষে, সেখানে আমাদের উচিত যুবসমাজের মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে এক সুসংহত ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। শুধু কঠোর আইন বা চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়; বরং, সঠিক দিশানির্দেশ, নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক সহানুভূতির মাধ্যমে যুবসমাজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আশার বীজ বপন করতেই হবে।

পরিশেষে বলা যায়, মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধুমাত্র একটি সামাজিক বা আইনি উদ্যোগ নয়; এটি আমাদের জাতীয় ও মানবিক দায়িত্ব। প্রতিটি যুবকের মধ্যে থাকা সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে সচেতন, স্বাস্থ্যবান ও সৃজনশীল করে তোলা আমাদের সবার কর্তব্য। যদি আমরা সত্যিকার অর্থে যুবসমাজকে শক্তিশালী করে তুলি, তবে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এই সমাজ একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।

মাদকাসক্তির প্রভাব যুবসমাজ ও সমগ্র সমাজের উপর যে গভীর ও মারাত্মক, তা শুধু ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষতি ঘটায় না, বরং সমাজের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করে দেয়। পরিবার, শিক্ষা, আইন ও সামাজিক নৈতিকতার সমন্বয়ে একত্রিত প্রয়াস ছাড়া এই চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এই প্রতিবেদনে আমরা দেখলাম, কিভাবে উচ্চ প্রত্যাশা, পারিবারিক অবনতি, মানসিক চাপ ও টেকসই সম্পর্কের অভাবে যুবসমাজ মাদকাসক্তির শিকার হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি, আমরা আলোচনা করলাম কীভাবে কঠোর আইন, সচেতনতা, পুনর্বাসন ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবেলা করা যেতে পারে।

ভবিষ্যতে যদি আমরা যুবসমাজকে যথেষ্ট শিক্ষা, সঠিক দিশা ও মানসিক সমর্থন দিতে পারি, তবে মাদকাসক্তির ভয়াবহ চক্র থেকে সরে এসে তারা নিজেদের জীবনে ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে মাদকসেবনের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং নৈতিকতার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও সমৃদ্ধ সমাজের সোপান গড়তে হবে।

একটি সুস্থ সমাজ গড়তে হলে, প্রথমেই আমাদের নিজস্ব পরিবার, বিদ্যালয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে তারা যুবসমাজকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে। সবশেষে, মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই একটি দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক আন্দোলন, যা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। যদি আমরা সকলে মিলে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি, তবে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা যুব সমাজ এক নতুন, সুস্থ এবং সমৃদ্ধ জীবনের পথে এগিয়ে যাবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/সাদিয়া সুলতানা রিমি/এমই

শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের স্বীকার এনটিআরসিএর ১-১২ তম ব্যাচ

কথায় আছে, কোনো জাতিকে যদি ধ্বংস করতে চাও, মেধাশূন্য করতে চাও, অর্থনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংশ

বৈচিত্র্য ও নবজীবনের সঞ্জীবনী সুধার খোঁজে বৈশাখ

বৈশাখ বঙ্গাব্দের প্রথম মাস। ১৪ এপ্রিল মানে পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। প্রথম দিনের

বিশ্বজুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও বৈশ্বিক অস্থিরতা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অনন্য সাধারণ সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। তিনি মার্কিন শাসন বিভাগের প্রধান

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সংঘাত: বাংলাদেশের ভবিষ্যত পথ কী?

বর্তমান বিশ্বরাজনীতিতে বন্ধু রাষ্ট্র বলে কিছু নেই। এক একটি পরিস্থিতি একেকটি সঙ্কটে পরিণত হতে পারে,
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সোলার ও কালি উৎপাদনে চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দুই বাংলাদেশি কোম্পানির সমঝোতা স্বাক্ষর

ঢাকা জার্নালিস্ট কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন

ব্যতিক্রমধর্মী ড্রোন শোতে ঝলমলে ঢাকার আকাশ

প্রথম আলোকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে: জামায়াত আমির

সরকারের মূল লক্ষ্য কর্তৃত্ববাদ যেন আর ফিরে না আসে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সহকারী কমিশনার সাইফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত এসপি অনির্বান গ্রেপ্তার

ঐক্যের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই: ফখরুল

সালথা সরকারি কলেজে যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন 

এয়ারকন্ডিশনের ভেতরে বড় বড় দামি অফিসে বসে তারা সংস্কারের কথা বলছে: তারেক রহমান

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার

যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের উদযাপনে বাংলা নববর্ষ

পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা

পহেলা বৈশাখের দিন বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর

আপা ফিরে আসলেন আরও ভয়ংকর রূপে: প্রেস সচিবের স্ট্যাটাস

বাজারে ইলিশের দাম কমলেও এখনো নাগালের বাইরে

শরীয়তপুরে সংঘর্ষে ফের শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ

ট্রেন লাইনচ্যুত, খুলনার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

রাষ্ট্রের গুণগত মৌলিক পরিবর্তন না হলে জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হবে: নাহিদ

নতুন বছর হোক নতুনভাবে শহর গড়ার অনুপ্রেরণার : মেয়র শাহাদাত

পাবনায় অধ্যাপক আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের নামে মামলা