ই-পেপার শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

আর কত প্রাণ গেলে বন্ধ হবে গুজবের ঝড়

তামান্না ইসলাম:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭

তাল কে তিল করা বাঙালি জাতির স্বভাব। কিছু হলেই গুজব রটিয়ে যায় আর এতে ইন্ধন দেওয়ার জন্য কিছু অসাধু মানুষ সর্বদা ওঁতপেতে থাকে। অনেকে আবার এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। গুজবের অন্যতম একটি মাধ্যম এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। আরব বসন্তের সময় তিউনিসিয়ায় ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গুজবের দ্রুত বিস্তার ঘটতে দেখা যায়।

গতদিনেই তো চরম আতঙ্ক আর উদ্বেগের মাঝে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে খাগড়াছড়িবাসী। সারারাত ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণ, আগুন দেওয়া, গোলাগুলি, হত্যার মতো বিভিন্ন পোস্ট দেখেছে তারা। এসব পোস্ট দেখে বেশির ভাগ মানুষই ছিলেন ঘুমহীন। এইচ এম ইউছুফ আলী নামের পানছড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো খাগড়াছড়িতে। এর জেরে সংঘর্ষ হলো ২৬ থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরের দিঘীনালায়। আর আমাদের দোকান পোড়ানো হলো ঘটনাস্থল ২৫ কিলোমিটার দূরের পানছড়িতে। এর আগে পাহাড়ি যুবকেরা পানছড়ি ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। সেনাবাহিনীর টহল টিমকে আটকে রাখে। গুজব পোস্টের কারণে রাতে আর ঘুমাতে পারলো না পুরো জেলাবাসী।’

গত ১৯ সেপ্টেম্বর এমনই এক গুজবের দোহায় দিয়ে হত্যা করা হয় তোফাজ্জল নামক এক যুবক কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হন মানসিক ভারসাম্যহীন এই যুবক। হত্যার আগে তাকে ভাত খেতে দিয়েছিলেন হলের শিক্ষার্থীরা। সামান্য সন্দেহের জেরে এক অসহায় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে পিটিয়ে মারলেন। অনেকেই কিছু না জেনে না বুঝেই হুজগে মেরেছে লোকটাকে। সবাই মারছে তাহলে নিশ্চয় লোক টা চোর ডাকাত বা খারাপ কিছু করছে। কেউ নিজের বিবেক কাজে লাগালে আজ হয়ত এসব গুজবের হাত থেকে এই বাংলাদেশ রক্ষা পেতো এবং আর হয়ত কোনো তোফাজ্জলের প্রাণ যেত না। কারো মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হতো না।

পদ্মা সেতু নির্মাণে শিশুদের মাথা লাগবে- এমন গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে সারা দেশে ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর বাড্ডায় তসলিমা রেনু নামে এক নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্কুলজীবনে কবি শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতায় পড়েছিলাম- ‘এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।’ এই চিলই হলো বর্তমানে গুজব। এভাবেই আমাদের কানে হাত না দিয়ে অন্যের কথায় চিলের পিছনে দৌড়ানোর জন্য হাজারো জীবন ঝরে যাচ্ছে। অনেকের মান সম্মান নষ্টও হয়ে যাচ্ছে।দেশে বিভিন্ন বন্যা পরিস্থিতি বা বিভিন্ন সমস্যায় মানুষ অন্য স্থানের বা অন্য সময়ের এমন কিছু ছবি বা

ভিডিও ভাইরাল করে যা আসলে সেখানে ঘটেনি। এমন ভাবে মানুষ কে ইমোশনাল করে তাদের থেকে অনেকেই টাকা নিচ্ছে অসহায় মানুষদের সাহায্য করার নামে। অনেক সময় দেখা যায় অনেকেই টাকা আত্মসাৎ করে ফেলে।

গত বছর ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী প্রতিষ্ঠান হামাস ইসরায়েলের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এরপর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এ সংঘাতকে ঘিরে বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দাবি করা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাতের ঘটনায় ইসরায়েলকে ১০০ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছেন। তবে দেশের ফেসবুকের থার্ড পার্টি পার্টনার বুম বাংলাদেশসহ একাধিক ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধানে জানিয়েছে, বানোয়াট সূত্র ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে পুরো বিষয়টি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

গতবছরের দেশের বিনোদন জগতের আলোচিত নাম জায়েদ খান। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে আলোচনায় আসেন তিনি। গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান এ অভিনেতা। এরপর তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সূত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে— জাতিসংঘের লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জায়েদ খান। এই দাবির বিপরীতে অনুসন্ধানে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, অভিনেতা জায়েদ খানের ‘হিউম্যানিটারিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ার বিষয়টি সত্য হলেও এটি জাতিসংঘ কর্তৃক প্রদত্ত কোনো অ্যাওয়ার্ড নয়। এমনও হাজারো ঘটনা ঘটে চলেছে আমাদের আশেপাশেই যা আমরা সত্যি ভেবে শেয়ার করছি। যাচাই না করেই ছড়িয়ে দিচ্ছি অন্যের মাঝে। এর শাস্তি সম্পর্কে জানা থাকলে হয়ত এমন টা করার আগে সকলে ভাবতো।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন ও সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। একটু ভুলের কারণে আপনি আসামি হতে পারেন সাইবার অপরাধের। সাইবার অপরাধীর বিচারে দেশে কঠিন আইন রয়েছে। জেনে বা না-জেনে যদি কেউ ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো অপরাধ করেন, তাহলে এর জন্য ভোগ করতে হবে কঠিন শাস্তি এবং রয়েছে মামলার বিধানও।

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য বা গুজবের বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে। অনলাইনে গুজব এখন একটা প্রতিদিনকার বিষয় হয়ে উঠেছে। মিথ্যা তথ্য ছড়ালে প্রথমে তিন বছরের জেলের বিধান রয়েছে। এরপর আবারও আইন ভঙ্গ করলে পর্যায়ক্রমে শাস্তির বিধানও বাড়বে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এ আইন প্রয়োগের পক্ষে নই।’কোনো সংবাদ যাচাই-বাছাই করা ছাড়া তা বিশ্বাস করা অনুচিত। পবিত্র কোরআনে ভুল তথ্য অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর, এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা: বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৬)।ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে কোনো সংবাদ পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে প্রচার করা। পাওয়া তথ্য যাচাই না করে প্রচার করা নিষেধ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সব শোনা কথা প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (আবু দাউদ , হাদিস নং- ৪৯৯২)।দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি অংশ গুজব, কুসংস্কারের মতো নীতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। যা ভাবতে খুবই লজ্জাবোধ হচ্ছে। অনেকের ধারণা দেশের মানুষ ‘মব সাইকোলজি’তে ভুগছে। যার অর্থ হলো—গণপিটুনির মানসিক প্রবণতা।

গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা ফৌজদারি অপরাধ। এটা জেনে অথবা না জেনেই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে উত্তেজিত জনতা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না তারই জানান দিচ্ছে। আমরা অবগত আছি গত কয়েক দিনে গণপিটুনিতে যারা জীবন হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন তারা সবাই সাধারণ জনগণ। আমাদের ভাবতে হবে এমন গুজবের বলি আমি, আমার প্রিয়জন বা আমার পরিবারের কেউও তো হতে পারি?ভ্রান্ত ধারণা হতে নিজেদের বেরিয়ে আসতে হবে তা না হলে গুজবের এই ঝড় বন্ধ হবে না। নিজেকে ও দেশ কে পরিবর্তন করতে গুজবে কান না দিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করুন ও দেশ ও দেশের মানুষ কে ভালোবাসতে শিখুন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

জাতিসংঘে নোবেল বিজয়ী ড.ইউনূস ও বাংলাদেশ

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ

জাতিসংঘ ৭৯তম অধিবেশন ও ইউনূস-বাইডেন বৈঠক

শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের ৭৯তম

অন্তর্বর্তী সরকারের মনোবল ধরে রাখাই এ সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ

একটা সময় পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনকালে দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিত। সে বিধান এখন নেই। এ

মেয়ে শিশুদের উপর সহিংসতা

আমাদের দেশে মেয়েদের উপর সহিংস কর্মকাণ্ড দিন দিন উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। উচ্চ বা নিম্ন সমাজের
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশ গঠনে তারেক রহমানকে নেতৃত্ব দিতে হবে: ফরহাদ মজহার

মব জাস্টিসের নামে অন্যায় করলে কোনো ছাড় নয়: আইজিপি

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই

তথ্য অধিকার আইন ও তথ্য কমিশন সংস্কার প্রয়োজন: ইফতেখারুজ্জামান

টেকনাফে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদসহ আটক ১

আহতদের চিকিৎসা-পুনর্বাসনে লড়াইয়ের ডাক মাহমুদুর রহমানের

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্নের নির্দেশ

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৮৬০

ভেঙে ফেলা হলো লালবাগ ক্লাবের পুরনো ভবন

পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ও বাড়ি ভাড়া দেওয়ার দাবি

সাশ্রয়ীমূল্যে ডিম ও মুরগি ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর আহ্বান

নির্বাচিত সরকারই জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে: তারেক রহমান

নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু নিশ্চিত করলো হিজবুল্লাহ

নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবরে নিরাপদ স্থানে খামেনি

সমালোচনার মুখে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে গঠিত কমিটি বাতিল

১০ম গ্রেড আমাদের দাবি নয়, আমাদের অধিকার

জনগণের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছি: ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা ওয়াসা ঠিকাদার সমিতির আহবায়ক কমিটি গঠন

জাতিসংঘে নোবেল বিজয়ী ড.ইউনূস ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়া