ধান, পাট আর সবজির দেশ বাংলাদেশ। তবে সময় বদলেছে—এখন কৃষির চেহারা বদলাতে চায় সরকার। শুধু ফলন নয়, চাই তথ্যনির্ভর পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তি আর টেকসই বিনিয়োগ। সেই লক্ষ্যেই যাত্রা শুরু করল একটি যুগান্তকারী প্রকল্প—এফএও ও গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায়। বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো এ প্রকল্পের সূচনাপর্ব। ছয়টি কৃষি অঞ্চলজুড়ে নেওয়া হবে নতুন পরিকল্পনা, থাকবে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার, আর যুক্ত হবে বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা। উদ্দেশ্য একটাই—বাংলাদেশের কৃষিকে নিয়ে যাওয়া আগামীদিনের উপযোগী এক রূপান্তরের পথে।
বাংলাদেশের কৃষি খাতে টেকসই ও সমন্বিত রূপান্তর সাধনের লক্ষ্যে ‘টেকনিক্যাল সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ইনভেস্টমেন্ট টুয়ার্ডস অ্যাগ্রিকালচার সেক্টর ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রাম (এএসটিপি)’ নামে নতুন একটি প্রকল্প শুরু করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা—এফএও।
বুধবার (২৩ জুলাই) ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের ইনসেপশন কর্মশালায় এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। সহযোগিতায় রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি সরকারের বৃহৎ কৃষি রূপান্তর কর্মসূচির (এটিপি) অধীনে বাস্তবায়িত হবে, যার লক্ষ্য হলো কৃষিকে আরও আধুনিক, টেকসই ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম। আরও উপস্থিত ছিলেন এফএও সদর দপ্তরের সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন ডিভিশন-এর পরিচালক আনপিং ইয়ে, গেটস ফাউন্ডেশন-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সিদ্ধার্থ চতুর্বেদী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত এফএও রিপ্রেজেন্টেটিভ জিয়াওকুন শি। কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের অন্তত ১৫০ জন অংশগ্রহণ করেন।
কৃষি সচিব বলেন, “বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রাক্কালে কৃষি নীতিমালাকে তথ্যভিত্তিক করে গড়ে তোলার এ প্রয়াস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প নীতিনির্ধারণে যুক্তিযুক্ত বিনিয়োগ ও দক্ষ প্রতিষ্ঠান গঠনে সহায়ক হবে।”
আনপিং ইয়ে বলেন, “এটি কেবল একটি প্রকল্প নয়, বরং সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন-এর মূর্ত রূপ। বিশ্বজুড়ে কার্যকর উদ্ভাবনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতাকে যুক্ত করে এটি কার্যকর প্রভাব ফেলবে।”
এএসটিপি প্রকল্পটি তিনটি মূল স্তম্ভে গঠিত:
১. তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা – এফএও-এর এমএএফএপি (মনিটরিং অ্যান্ড অ্যানালাইজিং ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার পলিসিজ) ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষিতে সরকারি ব্যয়ের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ ও বিনিয়োগ নির্দেশনা।
২. আঞ্চলিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা – ছয়টি অ্যাগ্রো-ইকোলজিক্যাল জোনজুড়ে পরিবেশ ও সম্পদ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু-সহনশীল পরিকল্পনা।
৩. প্রযুক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভাবন – আইওটি ভিত্তিক ব্যবস্থা, গ্লোবাল গ্যাপ, এবং ডিজিটাল অ্যাগ্রিকালচার টুলস-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তির পাইলট প্রয়োগ।
এই উদ্যোগ জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং পার্টনার প্রোগ্রাম-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএআরসি। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিএই, বিএডিসি, বারি ও ব্রি।
কর্মশালায় বিভিন্ন পর্বে প্রকল্পের মূল উপাদান উপস্থাপন, কারিগরি সংলাপ এবং উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা কার্যকর বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
এফএও জানায়, এই প্রকল্প কেবল বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ভবিষ্যৎ গড়ার রূপরেখা। লক্ষ্যমাত্রা— "বেটার প্রোডাকশন, বেটার নিউট্রিশন, বেটার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড বেটার লাইফ ফর অল।"
আমার বার্তা/এমই