বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে যেসব কাজ দরকারি ছিল, তার উল্টো যাত্রা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক বছরের মাথায় এমনটা ঘটেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘স্পষ্ট করে অভিযোগ করতে পারি। জবাব চাইতে পারি।’
বুধবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’শীর্ষক গোলটেবিলে তিনি এ কথা বলেন।
গোলটেবিলের শুরুতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, শেখ হাসিনার মতো স্বৈরচারী সরকার আসবে না। একটা গণতান্ত্রিক রূপান্তর হবে। এই গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াতেই মার খেয়ে গেলাম।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ধর্ম, জাতি, শ্রেণি বা লিঙ্গের নামে বৈষম্যবাদী রাজনীতি ও দর্শন যারা ধারণ করে, তাদের দাপট দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, তারাই এই অভ্যুত্থান করেছে।’
অভ্যুত্থানে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক ছিল উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, নারীকে আক্রমণকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার দাপট বেশি। আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু তাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে।
আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণ ছিল জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, গত এক বছরে এই মানুষগুলোকে বারবার রাস্তায় নামতে হয়েছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, অনেকগুলো সংস্কার কমিশন হয়েছে। সেটা তাদের উল্লেখযোগ্য কাজ। যদিও গঠনের মধ্যে সমস্যা ছিল। কিন্তু প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে শুধু সংবিধান ছাড়া আর কোনো প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মনোযোগ নেই। সংবিধান সংস্কার কমিশন নিয়ে একমাত্র আলোচনা। সেখানে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজন, যাঁদের একমাত্র আগ্রহ সংবিধানের মধ্যে এমন পরিবর্তন, যাতে তাঁদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো দিকে অগ্রগতি নেই।
এই সরকারের বেশি মনোযোগ এমন চুক্তি করা, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আছে, বলেন আনু মুহাম্মদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো আলোচনা ছাড়া স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেখানকার কর্মকর্তা বলেছেন, এই সরকার অনেক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যার উদাহরণ একমাত্র স্টারলিংক ছাড়া আর কেউ দেখেনি।
অন্তর্বর্তী সরকার এক বছরে মানুষের প্রত্যাশা পাঠে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের দাবিতে এই আন্দোলন ছিল। কিন্তু সেই কর্মসংস্থানের দাবিতে এই এক বছরে অনেকগুলো আন্দোলন হয়েছে।
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে আরও অংশ নেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন, লেখক-গবেষক আলতাফ পারভেজ, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জাহেদ উর রহমান, উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের গবেষণা বিশেষজ্ঞ সহুল আহমদ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস।
আমার বার্তা/এমই